ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পটকা ফুটানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে যুবক খুন

হত্যা, বিদু্যৎস্পৃষ্ট ও পানিতে ডুবে আরও ৫ মৃতু্য

প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পটকা ফুটানোকে কেন্দ্র করে দু'দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে যুবক খুন হয়েছে। এদিকে, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে নদীতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃতু্য, ময়মনসিংহের ভৈরবে মাজারের এক খাদেমকে হত্যা, বরগুনার তালতলী ও জামালপুরের বকশীগঞ্জে বিদু্যৎস্পৃষ্টে দুই মৃতু্য এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মায় ডুবে মাদ্রাসা ছাত্রের মৃতু্য হয়। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর- স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফুটবল খেলায় জয়ী হয়ে পটকা ফুটানোকে কেন্দ্র করে দু'দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সময় ইয়াকুব মিয়া-(৩২) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়েছে। এ সময় উভয়পক্ষের ৮জন আহত হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নরসিংসার গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। খুন হওয়া ইয়াকুব নরসিংসার উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত মো. আবদুলস্নাহর ছেলে। তিনি পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে। জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নরসিংসার গ্রামে সামিউন বাছির ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। এতে গ্রামের ১৪টি দল অংশ নেয়। শুক্রবার ফাইনাল খেলায় গ্রামের নাজাত গোষ্ঠীর নরসিংসার পশ্চিমপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব ও নরসিংসার উত্তরপাড়ার টাইগার স্পোর্টিং ক্লাব অংশ নেয়। নির্ধারিত সময়ে কোনো দলই গোল করতে না পারায় ট্রাইব্রেকারে ২-১ গোলে নরসিংসার পশ্চিমপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়। চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় ও সমর্থকরা মাঠে ফটকা ফোটায়। এ সময় আয়োজকরা মাইকে ফটকা ফুটানো বন্ধের ঘোষণা দেন। সে সময় নরসিংসার গ্রামের নাজাত গোষ্ঠীর দ্বীন ইসলাম দিলু পটকা ফুটানো বন্ধ করতে বলেন। এনিয়ে একই গোষ্ঠীর পশ্চিমপাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য কুদ্দুস মিয়ার ছেলে তারেকের সঙ্গে চাচাতো ভাই দ্বীন ইসলামের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমপাড়ার তারেক, তার বড় ভাই রায়হান ও ছোট মো. তারিফ সংঘর্ষে সম্পৃক্ত হয়। এক পর্যায়ে তারেক ছুরি নিয়ে উত্তরপাড়ার ইয়াকুবকে উপর্যুপরি আঘাত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ইয়াকুবকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। লাশ ময়নাতদন্ত করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার আলাপুর গ্রামে আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে খোয়াই নদীতে গোসলের সময় নিখোঁজ হয় দুই ভাই। পরে মোশাহিদ (৬) ও জুনাইদ (১০) নামে দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সকালে ওই গ্রামের কাছে নদী থেকে জুনাইদের মৃতদেহ ভেসে ওঠে। এর আগে শনিবার বিকালে স্থানীয়রা মোশাহিদের লাশ উদ্ধার করে। দুপুর ২টার দিকে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে নদীতে গোসল করতে নামে দুই ভাই। নিহত জুনাইদ ও মোশাহিদ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সুকড়িপাড়া গ্রামের ছালেক মিয়ার ছেলে। ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কালিকাপ্রসাদে রজব আলী নামে এক মাজারের খাদেমকে হত্যা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়দের খবরে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার সকালে কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের ডেকেরচর পশ্চিমপাড়া এলাকার পোড়াশাহ পাগলার মাজারের পাশ থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় এলাকাবাসী। পরে দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত রজব আলী কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের টেকের হাটি এলাকার মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে। তিনি পোড়াশাহ পাগলার মাজারের খাদেম হিসেবে মাজারের পাশে একটি টিনশেডে বসবাস করতেন। নিহতের চাচাতো ভাই দুলাল মিয়া জানান, রাত দেড়টার দিকে ভাইকে নিয়ে মাজারে একসঙ্গে চা খেয়েছি। এ সময় রুমান মিয়া, কট্রা পাগলা, আবুল মিয়া, এরশাদ মিয়া নামের চারজন লোক আমাদের সঙ্গে ছিল। আমি চলে যাওয়ার সময় তাদের মাজারে রেখে যাই। ভোর বেলা শুনতে পায় কে বা কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ভৈরব থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে ইটের এলোপাতাড়ি আঘাতে রজব আলীর মৃতু্য হয়েছে। এ ছাড়াও শরীরে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিবারে অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার তালতলীতে মায়ের সঙ্গে শিমুল তুলা পাড়তে গিয়ে বিদু্যৎস্পৃষ্টে কোরআনের হাফেজ নাজমুল হাসান (১৯) নামের এক যুবকের মৃতু্য হয়েছে। গত শনিবার বিকালে উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের ছোট ভাইজোড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাজমুল ওই গ্রামের হক ইসলাম আকনের ছেলে। জানা যায়, বিকালে মায়ের সঙ্গে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে শিমুল তুলা পাড়তে গাছে ওঠেন নাজমুল। গাছের পাশ দিয়ে পলস্নী বিদু্যতের সঞ্চালন লাইন টানা ছিল। এ সময় অসাবধানতাবশত বাঁশের কঞ্চিটি পলস্নী বিদু্যতের একটি তারে লেগে যাওয়ায় বিদু্যতায়িত হয়ে তুলাগাছ থেকে মাটিতে পড়ে যান নাজমুল। পরে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে ফেরদৌস আলী (২৮) নামে এক অটো রিকশা চালকের মৃতু্য হয়েছে। রোববার দুপুরে নিজ বাড়িতে অটো রিকশার ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়ার সময় তিনি মারা যান। ফেরদৌস আলী বগারচর ইউনিয়নের টালিয়া পাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে। বগারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রামাণিক মাসুম জানান, ফেরদৌস দুপুরে বাড়িতে অটো রিকশায় চার্জ দেওয়ার জন্য সংযোগ স্থাপন করতে গিয়ে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হন। এর কিছুক্ষণ পড়েই তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদীতে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মরদেহ ভেসে উঠেছে। রোববার সকালে উপজেলার আন্ধারমানিক ট্রলার ঘাটে স্থানীয়রা মরদেহটি দেখতে পায়। মরদেহটি আন্ধারমানিক ইসলামিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মক্তব বিভাগের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মো. নাঈমের (১০) বলে জানা গেছে। নাঈম সিংগাইর উপজেলার খাসেরচর এলাকার মৃত এলাহির ছেলে। তার বাবা মারা যাওয়ায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চর বালিরটেক এলাকায় নানির বাড়িতে থাকত সে। তিনদিন ধরে মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ থাকলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ থানায় বা পরিবারকে বিষয়টি না জানানোর কারণে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বিষয়টিকে রহস্যজনক বলে দাবি করেছেন নাঈমের মামা। মাদ্রাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, 'নাঈম নিখোঁজ হলেও কয়েকজন ছাত্র জানিয়েছে একজন ছাত্রকে তার নানি নিয়ে গেছে। আমরা ভেবেছি নাঈমকে নিয়ে গেছে। পরে জানতে পারি নাঈম নয়, অন্য এক ছাত্রকে নিয়ে গেছে। নাঈম পদ্মায় গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়। থানায় জানাইনি, আমাদের ভুল হয়েছে।' হরিরামপুর থানার ওসি শাহ নুর-এ আলম জানান, শিক্ষার্থী নিখোঁজের বিষয় মাদ্রাসা থেকে লিখিত বা মৌখিকভাবে জানানো হয়নি।