খরা ও দাবদাহে ঝরে পড়ছে আম-লিচুর মুকুল-গুটি
ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
চলতি বছর খরা ও তীব্র তাপপ্রবাহে ঝরে পড়ছে আম-লিচুর মুকুল-গুটি। কোনো কোনো এলাকায় ৬০ ভাগ ঝরে পড়েছে। এর ফলে এবার ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, প্রচন্ড খরায় দাবদাহে আটঘরিয়া ও আশপাশের এলাকার আম ও লিচুর মুকুল এবং গুটি ঝরে পড়ছে। ফলে চলতি বছর আম ও লিচুর সংকট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আটঘরিয়া ও আশপাশের এলাকায় সর্বত্র প্রায় ৬০ ভাগ আম ও লিচুর মুকুল এবং গুটি ঝরে পড়েছে। এতে এ বছর আম ও লিচুর ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে দিশেহারা চাষিরা। কোনোভাবেই গুটি ঝরে পড়া ঠেকাতে পারছেন না তারা।
প্রথমত আম ও লিচু গাছে পর্যাপ্ত মুকুল দেখা দিলেও বিগত প্রায় ২-৩ সপ্তাহ অব্যাহত প্রচন্ড দাবদাহে এবং বৃষ্টির অভাবে মুকুল ঝরে পড়া শুরু হয়, যা গুটি আসে তাও বিগত ২ সপ্তাহ যাবৎ দাবদাহে ঝরে পড়তে শুরু করে। কিছু গাছে গুটি দেখা গেলেও গরম ও দাবদাহে তাও ঝরে পড়ছে। বর্তমানে মাত্র ৪০ ভাগ গুটি দেখা গেলেও এভাবে আর কিছুদিন দাবদাহ অব্যাহত থাকলে তাও থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে এ বছর আম ও লিচুর ফলন মারাত্মক হ্রাস পাবে, ঘটবে মূল্য বৃদ্ধি। বর্তমানে পাবনার আটঘরিয়াসহ আশপাশে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে।
চাঁদভা গ্রামের লিচু চাষি নুরুল ইসলাম জানান, 'এবার যে পরিমাণ মুকুল এসেছিল আমরা খুব স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু তীব্র খরার কারণে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। এমন চলতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে।'
চাষিদের অভিযোগ, আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়া রোধে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের পাশে পাচ্ছেন না তারা।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ ও গুটিতে পানির স্প্রে করলে ঝরে পড়া রোধ করা সম্ভব। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এ কর্মকর্তা জানান।
ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে আমের বাগানে তুলনামূলক গুটি কম আসলেও প্রচন্ড দাবদাহে ঝরে পড়ছে মুকুল, যা ক্ষতির শঙ্কা করছেন অনেক কৃষক।
সারাদেশে দাবদাহে জনজীবন পৌঁছে গেছে চরম দুর্ভোগে। এরই ধারাবাহিকতায় পশু-পাখি, গাছপালাসহ কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন ফসলও শিকার হচ্ছে দাবদাহের। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় আয়তন অনুযায়ী আমের বাগান বেশি। তবে আশানুরূপ কলি আম দেখা না দিলেও যতটুকু হয়েছে সেটাও আবার ঝরে পড়ছে মোহ ও দাবদাহের কারণে। সারাদিন তাপমাত্রা বেশি থাকায় খুব সকালে পড়ছে শীত। এ কারণেই মোহ বা হপারে আক্রান্ত হচ্ছে আমের গুটি, তারপর ঝরে পড়ছে।
মূলত মোহ বা হপার হলো ফসলের এক ধরনের রোগ। আম চাষি ইসমাইল ও তুহিন বলেন, প্রচন্ড তাপমাত্রা ও সকালে শীতের ফলে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে, তাই সঠিক পরামর্শ পেলে আমরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাব।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী বলেন, এসময় আম চাষিদের সচেতন করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া ১ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১ লিটার পানিতে ইমিডা ক্লোরপিড ০.২৫ এমএল দিয়ে স্প্রে করতে হবে। কোনো বাগানের জমিতে রস কম থাকলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।