নেত্রকোনার পূর্বধলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তীব্র গরম উপক্ষো করে কৃষক মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি হলেও বাজারে বর্তমানে দাম কম থাকায় তারা হতাশা ব্যক্ত করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার ৭৮০ হেক্টর থাকলেও তা ছাড়িয়েছে ২১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও নিবিড় পরিচর্চায় এ বছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা প্রত্যাশা করছে। বর্তমানে চলছে তীব্র দাবদাহ। এই তাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও কৃষকরা এই প্রখর রোদকে কাজে লাগিয়েই ধান কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন। শ্রমিকদের উচ্চ মূল্যে মজুরি পরিশোধ করেই ধান কাটাতে হচ্ছে জমির মালিকদের।
উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়নের কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, অপেক্ষাকৃত দূরের জমিগুলো প্রতি কাঠা (৮শতক) ১২শ' টাকা এবং কাছের জমিগুলো এক হাজার টাকা দরে শ্রমিক দিয়ে কাটতে হচ্ছে। তবে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিনে ধান প্রতি কাঠা ৫০০ টাকা দরে কাটতে পেরে কিছুটা লাভবান বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন। কিন্তু মেশিনের অপার্যপ্ততার কারণে ফসল দ্রম্নত কাটতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। উপজেলার ৩৩টি কৃষি বস্নকের মধ্যে অনেক বস্নকেই হারভেস্টার মেশিন নেই। ফলে উচ্চ শ্রমিকমূল্য পরিশোধ করে ফসল কাটতে হচ্ছে।
উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের ধলা গ্রামের কৃষক কবির তালুকদার ও নজরুল ইসলাম জানান, তাদের বস্নকে সরকারি ভর্তুকি মূল্যের কোনো হারভেস্টার মেশিন না থাকায় শ্রমিক দিয়েই ধান কাটতে হচ্ছে। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ১৮ থেকে ২০টি হার্ভেস্টার মেশিন রয়েছে। এদের কয়েকটি হাওড় এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে হাওড় এলাকায় আগাম ফসল কেটে এখানে নিয়ে আসা হবে। হোগলা ইউনিয়নের ভরাকান্দা গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন ও আব্দুর রহিম বলেন, সরকার ভর্তুকি মূল্যে হার্ভেস্টার দেয় কৃষকের উপকারের জন্য। তাই তাদের দাবি, হার্ভেস্টার মালিক যেন কোনো অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা নিতে না পারেন, তাই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ধান কাটার মূল্য নির্ধারণ করে বিষয়টি যেন নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। এদিকে বর্তমান বাজার মূল্যে কৃষকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সরকার এক কেজি শুকনো ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৩২ টাকা। সেই হিসাবে এক মণের সরকারি মূল্য ১২৮০ টাকা। বাজারে কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে ৮০০-৮৫০ দরে। এখানে ডলকের নামে প্রতি মণে ২ কেজি বেশি নেওয়া হয়। সেই হিসাবে এক মণ কাঁচা ধানের দাম দাঁড়ায় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। এতে কৃষকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
পূর্বধলা খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদাল হোসেন জানান, এ বছর সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১২৮০ ও সিদ্ধ চাল ২০০০ টাকা মণ। তবে সরকারিভাবে এখনো ধান-চাল ক্রয়ের নির্দেশনা না আসলেও সামনে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগীর কবির জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষি অফিসের নিবিড় পরিচর্যায় এ বছর বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ হাজার ৪১৪ মে. টন ছাড়িয়ে যাবে। হার্ভেস্টার মেশিনের ধান কর্তনের বিষয়ে বলেন, মেশিন মালিককে ধান কাটার দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং তা নিয়মিত তদারকি করা হবে।