ট্যাক্স বৃদ্ধি :তেঁতুলিয়ায় শুকনো মরিচ কেনাবেচা বন্ধ, বিপাকে কৃষক

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
দেশের সর্ব উত্তরের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সর্ববৃহৎ হাট শালবাহান। এই হাটেই প্রতি সপ্তাহে শনি ও বুধবার কৃষকরা তাদের পণ্য বিক্রি করে আসছেন। প্রতি হাটে একশ' থেকে দেড়শ' টন এবং দেড় থেকে দুই কোটি টাকার কেনাবেচা হয়ে থাকে। গত অর্থবছরে ব্যবসায়ীদের থেকে ইউনিয়ন পরিষদ প্রতি ট্রাক বাবদ ট্যাক্স আদায় করত দুইশ' টাকা। এবার ইউনিয়নে ট্যাক্স সংশোধন করে তা করা হয়েছে ৩০০ টাকা। এতে প্রতি ট্রাকে ব্যবসায়ীদের প্রায় ট্যাক্স গুনতে হবে ৬ হাজার টাকা, যা আগের তুলনায় ৫ হাজার ৮০০ টাকা বেশি। এর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা শুকনো মরিচ বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা, হাটে মরিচ নিয়ে বাড়িতে ফেরত নিতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া গত অর্থবছরে হাট ইজারাদার প্রতি কেজি শুকনো মরিচে টোল আদায় করে ৩ টাকা, তা এবার বাড়িয়ে ৫ টাকা প্রস্তাব করেছে হাট ইজারাদার। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হঠাৎ করে তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে ট্যাক্সের পরিমাণ ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ ট্রাকপ্রতি ২০০ টাকা ট্যাক্স নিত, এখন তা বাড়িয়ে এক লাফে ৬ হাজার টাকা করেছে। এই ট্যাক্স দিয়ে মরিচ কেনা সম্ভব না বলছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষকরা বলছেন, 'আমরা ৩ টাকা প্রতি কেজিতে ট্যাক্স দিয়ে আসছি, এবার খরায় আমাদের মরিচের আবাদ ভালো না হওয়ায় এমনিতেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর ওপর যদি ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব। ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দীন খান বলেন, 'কৃষকরা মরিচ বিক্রি করলে হাট ইজারাদার পায় প্রতি কেজিতে ৩ টাকা, এখন দাবি করছে ৫ টাকা। ইউনিয়ন ট্যাক্স আমরা ব্যবসায়ীরা ট্রাক প্রতি দিতাম ২০০ টাকা, এখন তা দিতে হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা। একতরফা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ট্যাক্স বৃদ্ধি করেছে ইউনিয়ন পরিষদ। অনতিবিলম্বে এর সমাধান চাই আমরা।'  কৃষক আবু শাহিন জানান, গাছ থেকে এক কেজি মরিচ তুলতে মজুরি দিতে হয় ১০ টাকা। ৪ কেজি মরিচ দিয়ে পাওয়া যায় এক কেজি শুকনো মরিচ। আমি দুই মণ মরিচ বাজারে এনেছি। এসে শুনতেছি ইজারাদার ট্যাক্স বাড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের ওপর ইউনিয়ন ট্যাক্সও বাড়ানো হয়েছে। তাই তারা মরিচ কিনছে না, খরায় মরিচের ফলন এমনিতেই কম হয়েছে, মরিচ বিক্রি করে আজ মজুরি দেওয়ার কথা। এই রোদে পুড়ে মরিচ চাষ করে কী লাভ হলো। সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি সব বেড়ে গেছে। দ্রম্নত ব্যবস্থা না নিলে আমরা মাঠে মারা যাব।' শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সরকার আইন মেনেই ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেট সংশোধন করার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত আলোচনা করা হয়েছিল কি না সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের যে ফোরাম আছে সেখানে সংশোধনীয় মিটিংয়ের মাধ্যমে রেজলু্যশন করে তা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তেঁতুলিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল হাসান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ যে সংশোধনী এনেছে সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ৩০ দিনের মধ্যে সেটা পরিবর্তন সংশোধন করার ক্ষমতা রয়েছে। যেহেতু ট্যাক্স পরিবর্তনের সময় এখনো পার হয়নি, সেহেতু পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের ন্যায় ট্যাক্স আদায় চলবে।