সাম্প্রতিক সময়ে শরীয়তপুরে জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিল মাতবরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বোমা বিস্ফোরণ হয়। এতে গুরুতর আহত যুবক সজীব মুন্সি (২৫) ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ এপ্রিল মারা যায়।
সেই ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল ৬৫ জনের নাম উলেস্নখপূর্বক ২০-২৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় ৪/৮২ নম্বরের একটি মামলা দায়ের করেন সজিব মুন্সির বড় ভাই সুমন মুন্সি (৩৩)। যেখানে বিলাসপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আ. কুদ্দুস বেপারীকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফারুক হাওলাদারকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার ৪৮ নং আসামি আলমগীর হাওলাদার এবং সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনার জেরে প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেই চলেছে বিলাসপুরে।
এদিকে সজিব মুন্সি হত্যার শিকার হয়েছে নাকি আত্মঘাতী হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সজিব মুন্সি সংঘর্ষের সময় বোমা বহন করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ধাওয়া দিতে গিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে তার সঙ্গে থাকা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে তার পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি বেরিয়ে আসে।
সজিব মুন্সির মৃতু্যর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দফায় দফায় ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু হয়। গত কয়েক দিনে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারীর সমর্থক গিয়াস উদ্দিন মাতবর, ইব্রাহীম মাতবর, মামুন মাতবর, লোকমান মাতবর, রাজ্জাক মাতবর, লাল মিয়াসহ প্রায় শতাধিক লোকের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে প্রতিপক্ষ আব্দুল জলিল মাতবরের সমর্থকরা। অভিযোগ রয়েছে, বাড়ি থেকে গরু-ছাগল ও গোলার ধান পর্যন্ত নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। বুধবার দুই গ্রম্নপের ফের সংঘর্ষ ঘটে।
বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী বলেন, বিলাসপুর ইউনিয়নে মোট ১৮টি গ্রামের মধ্যে ১২টি গ্রাম বর্তমানে পুরুষশূন্য হয়ে গেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর গেলেও এসব গ্রামে মহিলা ছাড়া কোনো পুরুষই ছিল না। বর্তমানে বাড়ির মহিলারা যে কোনো দুর্ঘটনার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে আব্দুল জলিল মাতবর বলেন, আমার কোনো সমর্থক ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নয়, কিছু লোকজন পারিবারিক ক্ষোভ মেটাতে এসব কাজ করে থাকতে পারে। তবে সজিব মুন্সিকে প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেও আত্মঘাতী বলে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাজিরা থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক নাজমুল বলেন, বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন রয়েছে, তাই আপাতত এ বিষয়ে তেমন কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা প্রতিহত করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
জাজিরা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হক সজিব হত্যার শিকার নাকি আত্মঘাতী হয়ে মারা গেছে সে বিষয়ে কোনো কথা বলতে না চাইলেও প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটার বিষয়টি শিকার করেন।