চোখের পানির উসিলায় বৃষ্টি চাইলেন হাজারো মানুষ
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
বৈশাখের শুরুতেই তীব্র দাবদাহ, ঝাঁঝালো রোদ আর অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। প্রখর রোদ আর অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। তীব্র এই গরম থেকে পরিত্রাণের জন্য আলস্নাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে খোলা আকাশের নিচে এস্তেস্কার নামাজ আদায় করেছেন হাজারো মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশেষ এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শুরুর পূর্বে ইমাম সাহেব সকলকে তার পরনের পোশাক উল্টিয়ে নিতে বলেন।
শুক্রবার সকাল ৯টায় নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড খরা থেকে রেহাই পেতে মহান আলস্নাহর কাছে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন কুয়াকাটা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সাবেক পেশ ইমাম এবং খতিব মাওলানা রফিকুল ইসলাম সরোয়ারি।
নামাজ ও দোয়ায় ছাত্র, যুবকসহ শহরের আশপাশের শত শত মুসলিস্ন অংশগ্রহণ করেন। তাওবাতুন নাসুহা বা একনিষ্ঠ তাওবার মাধ্যমে আলস্নাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি কামনা করে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করা হয়। মোনাজাতে মুসলিস্নরা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্তিসহ দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া করা হয়।
নামাজে অংশ নেওয়া মুসলিস্নরা জানান, প্রচন্ড দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠঘাট কৃষিজমি। তীব্র খরায় ফসল উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। গরমে অতিষ্ঠ মানুষসহ বন্য প্রাণীরা। এখন চাষাবাদ করতে পারছি না। তাই আলস্নাহর অশেষ রহমতের জন্য এ নামাজ আদায় করা হয়েছে।
নামাজ শেষে ইমাম রফিকুল ইসলাম সরোয়ারী বলেন, 'প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আলস্নাহর রহমত ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমরা এ নামাজের আয়োজন করেছি। আমাদের চোখের পানির বিনিময়ে আলস্নাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি চেয়েছি। আশা করছি আলস্নাহ তার বান্দাদের নিরাশ করবেন না।'
\হভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, প্রচন্ড দাবদাহ ও অসহনীয় গরম থেকে বাঁচতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় এস্তেস্কার নামাজ আদায় করেন হাজারো মুসলিস্ন। শুক্রবার সকাল ১০টায় উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফফিরাবাদ ঈদগাঁও মাঠে বৃষ্টির জন্য এস্তেস্কার নামাজে কাঁদলেন মুসলিস্নরা।
এই নামাজে কয়েক হাজার মুসলিস্ন অংশ নেন। নামাজ শেষে বিশেষ দোয়াতে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেদের পাপের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা চেয়ে বৃষ্টির জন্য কান্নাকাটি করেন মুসলিস্নরা।
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির আশায় এস্তেস্কার নামাজ আদায় করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় কালীগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড ভাদার্ত্তী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ কমিটির আয়োজনে মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা মাঠে খোলা আকাশের নিচে এ নামাজ আদায় করেন মুসলিস্নরা।
নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় মহান আলস্নাহর কাছে নিজেদের পাপের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা চেয়ে অঝোরে কেঁদেছেন ইমাম ও মুসলিস্নরা।
নামাজে ভাদার্ত্তী দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ, ভাদার্ত্তী পুরাতন জামে মসজিদ, মদিনাতুল উলুম ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, ভাদার্ত্তী দক্ষিণ পাড়া সামাজিক কবরস্থান ও ঈদগাহ কমিটির নেতারা, বিভিন্ন পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি শোর মানুষ অংশ নেন।
ভাদার্ত্তী দক্ষিণ পাড়াজামে মসজিদ ও নামাজ আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. রফিজ উদ্দিন বলেন, আলস্নাহর শরণাপন্ন হলে তিনি বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, বালা-মুসিবত অবশ্যই দূর করে দেন। খরা থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি আলস্নাহর খাস রহমত। তাই বৃষ্টির আশায় এস্তেস্কার নামাজ আদায় করা হয়েছে।
নামাজে ইমামতি ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ভাদার্ত্তী দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদের মুফতি আরিফুল ইসলাম।
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, একটানা অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুল। এমন দাবদাহ থেকে মুক্তি ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষণের জন্য পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে সালাতুল এস্তেস্কার নামাজ আদায় করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টায় একযোগে উপজেলার ৮টি স্থানে এ বিশেষ নামাজ আদায় করা হয়। উপজেলা সদরের কেরামতিয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে হয় প্রধান জামাত। এতে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসলিস্ন অংশ নেন।
নামাজ শেষে প্রচন্ড গরম থেকে রক্ষা পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে একপশলা বৃষ্টির জন্য দু' হাত তুলে প্রার্থনা করে অঝোরে কেঁদেছেন মুসলিস্নরা। এ যেন উপায়ান্তহীন মানুষের সর্বশেষ প্রচেষ্টা। মোনাজাতে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে দাবদাহ থেকে মুক্তির জন্য কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ জানান মুসলিস্নরা। একটু বৃষ্টির আশায় আলস্নাহ তাআলার দরবারে এমন ফরিয়াদ তাদের।
এ সময় অতীতের ভুলত্রম্নটির জন্য আলস্নাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে ইমামের সঙ্গে অঝোরে কাঁদছিলেন মুসলিস্নরা। নামাজ ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন রাঙ্গাবালী থানা জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
একই সময় বৃষ্টি বর্ষণের জন্য উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ফজলুল করিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গদিঘাট ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, মোলস্নার বাজার জামে মসজিদ, খালগোড়া জামে মসজিদ, সামুদাবাদ, নেতা বাজার ও কাছিয়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে সালাতুল ইস্তেস্কার নামাজ আদায় করা হয়।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশের পশ্চিমাঞ্চল। এ এলাকায় দিনের তাপমাত্রা প্রতিদিন প্রায় ৪২ ডিগ্রি কাছেই থাকছে। এ অবস্থায় প্রচন্ড গরমে সব শ্রেণির মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তীব্র খরা থেকে বাঁচতে বৃষ্টির আশায় এস্তেস্কার নামাজ আদায় করেছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের রিফাইতপুর এলাকার মুসলিস্নরা।
শুক্রবার বাদ জুমা উপজেলার রিফাইতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ নামাজ আদায় করে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মুসলিস্ন বৃষ্টির জন্য মোনাজাত করেন। এ সময় নামাজের ইমামতি ও মোনাজাত পরিচালনা করেন রিফাইতপুর সরকারপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ইব্রাহিম খলিল।