টানা তাপদাহে সবজি নিয়ে চিন্তায় কৃষক
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
তীব্র গরম ও তাপদাহে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের সবজি ক্ষেত। সবজি নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের কৃষকেরা। কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের কৃষক হারুন উদ্দিন ৪০ শতক জমিতে পটোল আবাদ করেন। তবে তীব্র গরম ও তাপদাহে পটোল ক্ষেত পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছে পটোল আসার পরেই তীব্র গরম ও তাপমাত্রার কারণে পটোলসহ গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। পুরো ক্ষেতের একই অবস্থা।
গত কয়েকদিনের টানা তাপদাহে মৌসুমি সবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কৃষি অফিস বলছে, ফসল রক্ষায় কৃষকদের সচেতন করছেন কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার হজরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর ও রোহিতপুর ইউনিয়নে ইউনিয়নের কৃষি মাঠগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, মাচায় মাচায় ঝুলছে লাউ, পটোল, শসা ও করলা। কোথাও আবার বেগুন, টমেটো, কাঁকরোল, লাল, পুঁই ও পালংশাকসহ নানা রকমের নতুন নতুন সবজি ক্ষেত। এমন সবুজ ক্ষেতের দৃশ্য এখানে হরহামেশাই চোখে পড়ছে। তবে সবজি ক্ষেতগুলোতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব মাঠে কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি পাট, ভুট্টা, সবজির মধ্যে কইডা, চিচিঙ্গা, করলা, কচু, ঢেঁড়স, ডাটা, পুঁইশাক আবাদ বেশি করেছেন। পানির অভাবে অনেক কচুর জমি শুকিয়ে গেছে। ফলে কচু গাছগুলোর পাতা শুকিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। অধিক তাপে ভুট্টা গাছগুলো খুব দ্রম্নত শুকিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার কলাতিয়া এলাকার বাসিন্দা আমির আলী বলেন, তার প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে করলা আবাদ করেছেন। টানা কয়েকদিনের গরমে করলা ঝরে পড়ছে এবং গাছের পাতাগুলো মরে যাচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী বেলনা গ্রামের কৃষক জলিল উদ্দীন বলেন, উন্নত বীজ ব্যবহার করে একাধিক জমিতে কইডা, চিচিঙ্গা ও করলা আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত সবজির জমিগুলো মোটামুটি ভালো আছে। তবে আরও গরম পড়লে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
একই গ্রামের কৃষক মোড়ল হক বলেন, তিনি তার জমিতে এ বছর কইডা, চিচিঙ্গা ও করলা আবাদ করেছেন। অতি গরমে জমিতে পানি না দিতে পারায় ফুল হলেও ফল হচ্ছে না। ফুলগুলো ঝরে যাচ্ছে।
আরেক কৃষক উজ্জ্বল বলেন, রোদের তাপে পটোল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, করলা গাছের ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে এবং ফসল বাড়ছে না। ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আম, কাঁঠাল ও লিচুর গুটি শুকিয়ে ঝড়ে পড়ছে।
হজরতপুর পূর্ব ঢালীকান্দি গ্রামের কৃষক আয়নাল হোসেন জানান, দুই মাস আগে ৪০ শতক জমিতে শসার আবাদ করেন। আবাদ করতে তার প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। শসার ফলন ভালো হয়েছিল। কচি শসা গাছের ধরার পরই তীব্র গরম ও তাপদাহে শসাক্ষেত পুড়ে যাওয়ার মতো হয়ে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কচি শসা আর বড় হতে পারেনি। এখন ক্ষেত থেকে শসা তুলতে পারবে এমন অবস্থা নেই।
আয়নাল জানান, শসা বিক্রি করে খরচ বাদে আরও প্রায় ৪০ হাজার টাকা মুনাফা হতো। কিন্তু শসা নষ্ট হওয়ায় এখন লাভ তো দূরে থাক, খরচই উঠবে না বলে জানান তিনি। একই এলাকার তাহের আলী জানান, মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ গরম বাতাস ভুট্টা পাশাপাশি এলাকার সবজি ক্ষেতও নষ্ট হতে বসেছে। বর্তমানে সবজির ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হয়েছিল, তবে সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক কৃমক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদিকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিমেল সরকার জানান, তীব্র গরমে কিছু কিছু সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে কি পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, বিষয়টি জানাতে পারেননি তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন মুনমুন বলেন, টানা কয়েকদিনের তাপদাহে সবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। বৃষ্টি না থাকায় এবং জমিতে পানি না দেওয়ার কারণে সবজির ক্ষতি হতে পারে। তবে গ্রীষ্মকালীন সবজি পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, করলা ছাড়াও মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল ও লিচু ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাপ প্রবাহের কারণে স্প্রে মেশিন দিয়ে ফল গাছে পানি দেওয়ার পাশাপাশি গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে।