কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু নিচে প্রমত্তা পদ্মা নদী ও পদ্মার শাখা গড়াই নদী এখন শুধু ধু-ধু বালুর চর। পদ্মা ও গড়াই নদী এখন পরিণত হয়েছে ছোট খালে। ভেড়ামারাসহ জেলায় লক্ষাধিক নলকূপে উঠছে না পানি। এমনকি ও পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নদীর এমন করুণ পরিণতির কারণে এখানকার মানুষের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। পানির জন্য চলছে হাহাকার। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়াসহ পার্শ্ববর্তী চার জেলার লক্ষাধিক চাষি।
পদ্মা ও গড়াই নদীতে পানি না থাকায় ভেড়ামারাসহ জেলায় লক্ষাধিক নলকূপে উঠছে না পানি। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নদীর এমন করুণ পরিণতির কারণে এখানকার মানুষের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। পানির জন্য চলছে হাহাকার। প্রাকৃতিক এই সমস্যা সমাধানে তাদের কিছুই করার নেই। তবে বৃষ্টি হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে। প্রতিটি বাড়িতেই নিজস্ব নলকূপ আছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে এসব এলাকার প্রায় সব নলকূপই হয়ে গেছে অকেজো। যেগুলো কাজ করছে সেগুলোতে পানি উঠছে অতি সামান্য। নদীর তীরবর্তী বসবাস কর মানুষের অবস্থা সব চাইতে বেশি খারাপ। পানির সংকট এতটাই প্রকট যে খাবার পানির পাশাপাশি গোসল এবং গবাদি পশুর জন্য পানির ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাওয়া লাগছে। নদীগুলোর নাব্য না থাকার পাশাপাশি পানির স্তর বিগত বছরগুলোর তুলনায় নেমে যাওয়ায় হস্তচালিত নলকূপে উঠছে না পানি। পানি সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা সক্রিয় না থাকায় বিপাকে পড়েছে জনজীবন। ভেড়ামারা পৌরসভার সাপস্নাই পানির বন্ধ রয়েছে। এটি একটি প্রাকৃতিক সমস্যা। বৃষ্টি শুরু হলেই এই সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।
পানির স্তর এভাবে কমে যাওয়ার পেছনে যত্রতত্র গভীর নলকূপ ব্যবহারকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তারা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পানিওয়াদি শুকিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে যেসব নলকূপের লেয়ারকম দেওয়া সেসব নলকূপে পানি না ওঠারই কথা। নতুন নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাফিক আরও গভীরে লেয়ার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উৎসগুলো থেকে আসা পানি নদীতে সংরক্ষণ করা গেলে অনাবৃষ্টি বা শুষ্ক মৌসুমে যেমন মিটবে পানির চাহিদা। অন্যদিকে বাড়বে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আর এভাবেই সম্ভব এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসার, এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী সবাই।
২০২২ সাল থেকে ভেড়ামারার গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) তিনটি পাম্পের মধ্যে দু'টি পাম্প অচল হয়ে রয়েছে। বাকি একটি পাম্পটি দিয়ে কোনো মতে সেচ কার্যক্রম চলছিল। গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি ২০২৪ থেকে ৩য় পাম্পটিও অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) কার্যক্রম। বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়াসহ পার্শ্ববর্তী চার জেলার লাখখানেক বোরো চাষি। স্বল্প খরচের সেচ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন চার গুণ বেশি খরচ করে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে কোন মতে ধানের জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। কবে থেকে আবার সেচ প্রকল্পের পানি ধানের জমিতে গড়াবে তার কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
জিকে কৃষক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, 'এ বছর আমরা এখনো পানি পাইনি। কবে পানি নাগাদ পানি পাব তাও জিকের লোকজন বলতে পারছে না। আমরা এখন শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে ধান রোপণ করছি। ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে এক বিঘা জমি চাষ করতে অন্তত ৪৫ লিটার তেল লাগবে। এ ছাড়া মেশিন ভাড়াসহ বিঘাতে কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা বেশি ব্যয় হবে। এতে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ব্যয় অনেক বাড়বে।'
ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, 'দু'টি পাম্প আগে থেকেই নষ্ট। তৃতীয় পাম্প দিয়ে ৩১ জানুয়ারি ক্যানেলে পানি সরবরাহ শুরু হয়। কারিগরি ত্রম্নটির মুখে ১৯ ফেব্রম্নয়ারি'২৪ ওই পাম্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কবে নাগাদ সেচ কার্যক্রম চালু করা যাবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। পাম্পটি সচল করার চেষ্টা চলছে।'
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদা সুলতানা বলেন, 'নদীগুলোর নাব্য না থাকার পাশাপাশি পানির স্তর বিগত বছরগুলোর তুলনায় কমে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করে ধান রোপণে কৃষকদের ব্যয় বাড়ছে। এতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। পানি এলেও কিছুটা সুফল মিলবে কৃষকদের। এতে ধান চাষের খরচ অনেক বেড়ে যাবে।'