ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
হাওড়াঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ইরি-বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকরা এখন ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলেও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় আগাম ধান কাটা ও মাড়াই করছেন কৃষকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। আর বাজারে ভালো দাম থাকায় লাভের আশা করছেন তারা। তবে ধান কাটা পুরোদমে শুরু হতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগতে পারে। শেষ পর্যন্ত মাঠের পর মাঠ দোল খাওয়া স্বপ্নের বোরো ধান কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১৯ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। ধান উৎপাদন হতে পারে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আগাম জাতের মিনিকেট ধান কাটতে শুরু করেছেন উপজেলার কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা যায়- উপজেলার বেশকিছু ইউনিয়নে কাস্তে নিয়ে তীব্র তাপদাহকে উপেক্ষা করেই আগাম জাতের ধান কাটার উৎসবে মাঠে নেমে পড়েছেন কৃষকরা। সদর ইউনিয়নের কৈডালা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আগাম জাতের ধানপাকা শুরু হয়ে গেছে। যেকোনো সময় আবহাওয়া খারাপ হতে পারে। বাজারে মিনিকেট ধানের দামও এখন অনেক বেশি। ফলনও হয়েছে অনেক। তাই ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছেন। হাটলালা গ্রামের সাইদুল জানান, এ বছর ১৩ বিঘা জমিতে আগাম জাতের মিনিকেট ধান রোপণ করেছিলেন। প্রতি বিঘা ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘাতে ধান পাচ্ছেন ২৫ থেকে ২৬ মণ, বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ১৩শ' থেকে ১৪শ' টাকা মণ। শেষ পর্যন্ত এ রকম বাজার মূল্য থাকলে প্রতি বিঘা জমি থেকে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজিউল হক বলেন, আগাম মিনিকেট জাতের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। ধানের ফলন ও দামে বেশ খুশি কৃষক।
নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, নিকলী, কুলিয়ারচরসহ আশপাশের উপজেলার হাওড়গুলোতে ইরি-বোরো ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত কৃষক ও কৃষানিরা। এ বছর হাওড়ে ইরি-বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে কয়েক লাখ একর। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন অনেক বেশি হয়েছে।
হাওড়ে ঘুরে দেখা গেছে, বিআর-২৯, বিআর-৯৪, বিআর- ১০৭, বিনা ধান একর প্রতি ৮০-১০০ মণ হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি। বর্তমানে তারা কাচা ধান মণ প্রতি ৯০০ টাকা থেকে ৯৮০ টাকা বিক্রি করছেন। হাওড়ে গিয়ে বিভিন্ন পাইকাররা ধান কিনে নিচ্ছেন। সরকার এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলার খাদ্য গুদামে সংরক্ষণ করার জন্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কেনার কোনো চূড়ান্ত উদ্যোগ নিচ্ছে না। কিন্তু কৃষকরা ধান নিয়ে হাওড়ে রাখতেও পারছেন না।
কৃষকরা জানান, ইরি-বোরো ধান রোপণের সময় মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কাছে চড়া সুদে টাকা নিয়ে জমি চাষ করতে হয়েছে। এখন এসব মধ্যস্বত্ব ভোগীর ধান দিতে গিয়ে অর্ধেক গোলা হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব জমিতে পানি দিতে গিয়ে প্রতি একরে খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে বিদু্যতের লো-ভল্টিজের কারণে ধানের ফলন ভালো হয়নি। তবে যদি সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ডের মাধ্যমে ধান কেনে, তাহলে মাঝারি সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
বিশ্বম্ভরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওড়ে বোরো ধান কর্তন ২০২৪ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের আয়োজনে বৃহস্পতিবার খরচার হাওড়ে কৃষানী শিবানী সাহার জমিতে বোরো ধান কর্তন অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নয়ন মিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপস্থিত ছিলেন থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বণিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুলস্নাহ হেল মারুফ ফারুকী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বেনজীর আহমেদ মানিক, উপজেলা প্রকৌশলী একরামুল হোসেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা রোমান হাসান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল মিয়া, প্রেস ক্লাব সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমদ, জমির মালিক শিবানী সাহা প্রমুখ।
উৎসবে ইউএনও মফিজুর রহমান বলেন, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় হাওড়ের কৃষকরা সাচ্ছন্দে বোরো ধান তুলতে পারছেন। আমরা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের ফসল ঘরে তোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নয়ন মিয়া বলেন, এ পর্যন্ত হাওরে ৭৩% ধান কর্তন হয়েছে, ফলনও ভালো। আশা করা যায় কয়েক দিনের মধ্যেই হাওড়ের ধান কাটা শেষ হবে।