গোয়াল ঘরে একে একে ঢলে পড়ে চারটি গরু, নিঃস্ব দিনমজুর কামাল

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
আর্থিক সচ্ছলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ। চাহিদা মিটিয়ে কিছুটা সঞ্চয় করার নেশায় দিনভর শরীরের ঘাম ঝরাচ্ছে কর্মক্ষেত্রে। ভবিষ্যৎ সঞ্চয় মানে ছেলে-মেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করা। কুমিলস্নার তিতাস উপজেলার কড়িকান্দি ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের দৈনিক মাটি কাটার শ্রমিক কামাল হোসেন আর গৃহিণী হাছিনা আক্তারের এমন স্বপ্ন ছিল। গড়ে তুলেছিলেন নিজ বাড়িতে ৬টি গরু নিয়ে ছোট্ট একটি খামার। গত রোববার সন্ধ্যায় গোয়াল ঘরে গরুগুলো নেওয়ার পর একে একে ৪টি গরু মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে। শেষ হয়ে যায় পরিবারের স্বপ্ন। জানা যায়, উপজেলা রাজাপুর গ্রামের দৈনিক শ্রমিক হিসেবে মাটি কাটার কাজ করেন কামাল হোসেন। স্ত্রী হাছিনা আক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে সন্তানদের লেখাপড়া, বিশেষ করে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য নিজ বাড়িতে একটি ছোট্ট খামার করেন। তিন বছর আগের ২টি গরুসহ গত কোরবানি ঈদের পর আরও ৪টি গরু কিনে লালন-পালন করছিলেন। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গরুগুলোকে খড় খাওয়ানোর পর পানি পান করিয়ে গোয়াল ঘরে নিয়ে যান হাছিনা। গোয়াল ঘরে নেওয়ার পর ৬টি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এদের মধ্যে তাৎক্ষণিক ৪টি গরু মারা যায়। সোমবার সকালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাড়ির পাশে মৃত ৪টি গরুকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, মরে যাওয়া ৪টি গরুর আনুমানিক বর্তমান বাজার মূল্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা হবে। দিনমজুর কামাল হোসেন জানান, 'আমি বাইরে ছিলাম, খবর পেয়ে এসে দেখি আমার স্বপ্নগুলো মরে গেছে। আমি মাটি কেটে সংসার চালাই, ধার-দেনা করে গরুগুলো কিনেছি। এবার ঈদে গরুগুলো বিক্রি করার কথা ছিল। আমার বাড়িতে ৭ শতক জায়গা ছাড়া আর কোনো জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা করে সংসারের চাহিদা মেটাতে হয়।' কামালের স্ত্রী হাছিনা আক্তার বলেন, 'একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। এছাড়াও আমার বড় বোন মৌটুপীর আছমা ও কানাইনগরের তাছলিমা আক্তারের কাছ থেকে দেনা করে এক বছর আগে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৩টি গরু এবং দেড় লাখ টাকা দিয়ে আরেকটি গরু কিনেছিলাম। বোনদের বলেছি এই কোরবানি ঈদে গরুগুলো বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করব। আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। আমি এখন কি করে বাঁচব।' উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. উমর ফারুক বলেন, 'হাছিনা আক্তার আমার অফিসে এসেছিলেন। আমি বলেছি মিটিং শেষ করে তাদের ওখানে যাব।' ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন ছামী বলেন, আমি অফিসের কাজে ঢাকা আছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হাসান বলেন, ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তারপরও আমি প্রাণিসম্পদ অফিসে বলেছি তারা যেন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখেন।