ভাগ্নের বিয়ের কেনাকাটা করতে ভাতিজার স্ত্রী শেফালি আক্তারকে নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনারপাড় গিয়েছিলেন সদরের উজান বাড়েরা এলাকার আবদুর রহমান। বাজার নিয়ে গেলে রাতেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ভাগনে খোকনের। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাদের। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের লেভেল ক্রসিং অটোরিকশায় পাড় হওয়ার সময় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এই দুইজন।
ফরিদা আক্তার ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া স্বামী আব্দুর রহমানের ছবি হাতে নিয়ে বাকরুদ্ধ। যে বাড়িতে আজকে বিয়ের আনন্দ উলস্নাস হওয়ার কথা ছিল; সেই বাড়িতেই চলছে নিহতের স্বজনদের আহাজারি। ভাগনের বিয়ের কেনাকাটা করতে গিয়ে এমন পরিণতি হবে তা কখনো ভাবেননি স্বজনরা।
নিহত আব্দুর রহমানের স্ত্রী ফরিদা আক্তার বলেন, 'রাতে কেনাকাটা শেষ করে কল দিয়ে বলে বাড়িতে আসতেছে; কিন্তু অনেকটা সময় গেলেও না আসায় মোবাইলে কল দিলে আর রিসিভ হয়নি। পরে শেফালী আক্তারের ছেলে কিছুক্ষণ পর এসে বলে তার মা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। এই খবর শোনার পর এলাকার মানুষ গিয়ে নিহত দুইজনকে শনাক্ত করে।'
নিহতদের স্বজন মোতালেব হোসেন বলেন, আমাদের পাশের এলাকা কালিকাপুর পাত্রী দেখতে গিয়ে পছন্দ হওয়ায় রাতেই বিয়ের বাজার করতে আবদুর রহমান ও শেফালী আক্তার গাঙ্গিনারপাড় যান। সেখান থেকে বাজার করে অটোরিকশা যোগে বিদ্যাময়ীর পাশ দিয়ে আসার সময় জামালপুরগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে দুইজন নিহত হন। অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে ১০০ গজ দূরে গিয়ে পড়ে। দুইজনের মরদেহ বেশ কয়েক টুকরো হয়। এমন মৃতু্য দুঃখজনক।
কিছুতেই নিজেকে সামাল দিতে পারছেন নতুন বর মো. খোকন। তার কান্নায় স্তব্ধ এলাকাবাসী। তিনি বলেন, বিয়ের সব আয়োজন মামা করেছে; বাজার করারও তার দায়িত্ব ছিল। বাজার করতে গিয়ে মামা আর ভাবী আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে যাবে- এমন জানলে, বিয়ের নাম মুখেও নিতাম না।
বুধবার দুপরে উজান বাড়েরা গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুই বাড়িতে চলছে আবদুর রহমান ও তার ভাতিজার স্ত্রী ফরিদা আক্তারের দাফন-কাফনের প্রস্তুতি। যাদের আজকে বিয়ের দাওয়াতে আসার কথা ছিল তারাই আসছেন শোকের বার্তা শুনে। এমন ঘটনায় হতবাক স্বজন ও এলাকাবাসী।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাতে জামালপুরগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অটোরিকশার যাত্রী আবদুর রহমান ও শেফালী আক্তারের মৃতু্য হয়। আজকে দুপুরে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে ঘটনার পর থেকে অটোরিকশা চালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না; তাকে পেলে জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো কারণ জানা যাবে।