নেই সুনির্দিষ্ট আইন!

তামাক নামক 'বিষ' চাষে ঝুঁকছেন পাহাড়ের কৃষক

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
নির্দিষ্ট আইন না থাকায় ক্ষতিকর তামাক চাষে ঝুঁকছেন পাহাড়ের কৃষক। কোম্পানিগুলোর চমকপ্রদ প্রস্তাবে ঋণের জালে বন্দি হয়ে তামাক চাষ করছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে কৃষককে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বিকল্প ফসল চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে তামাক চুলিস্নতে দৈনিক শতশত মণ গাছ, কাঠ পুড়ানোর ফলে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বন, ঠিক তেমনি ভারসাম্য হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে বগাচতর, গুলশাখালী ও আটারকছড়া ইউনিয়নে এবং অন্যান্য ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় শতশত বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছেন কৃষকরা। ক্ষতিকর জেনেও অধিক লাভের আশায় জমিতে বিষ ফলাচ্ছেন তারা। পাহাড়ের কৃষক রফিকুল, শাহ আলম ও রহিমা খাতুনসহ অনেকে জানান, ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে ফলাচ্ছেন তামাক। তামাক চাষে যেমন একদিকে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়, অন্যদিকে তেমনি শরীরে বাসা বাদে নানা রোগ। অনেক কৃষক এখন শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তবে সরকারি প্রণোদনার শতভাগ নিশ্চিতসহ পার্বত্যাঞ্চলের কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান তারা। তামাক চাষি ফজলে করিম জানান, পাহাড়ে পানি সংকটের ফলে এ চাষে ঝুঁকছেন তারা। ধান বা অন্য ফসলে সেচ বেশি প্রয়োজন হলেও তামাকে খুব কম। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই কেউ কেউ তামাক চাষ করছেন। এছাড়া তামাক চাষে কোম্পানিগুলো অগ্রিম ঋণ, সার, ওষুধ, বীজ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন সহযোগিতার ফলে কৃষকদের নিজ থেকে অর্থ ব্যয় করতে হয় না। তাই বিক্রির পর লভ্যাংশের কিছু অর্থ দিয়েই তাদের সংসার চালাতে পারেন। স্থানীয় জনসাধারণের দাবি তামাক চাষ রোধে প্রশাসনের এগিয়ে আসা জরুরি। দেখা গেছে, তামাক পাতা পোড়ার একমাত্র কাঁচামাল হিসেবে কাঠ বা লাকড়ি কাটার নামে বন উজাড় হচ্ছে। সুশীল সমাজ বলছেন, লংগদুতে তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী, ধান, ভুট্টা ও গম চাষ করতে কৃষকদের আরও বেশি আগ্রহী করতে হবে। জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিস সহযোগিতা করলে এ অঞ্চলের তামাক চাষের বিকল্পে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের উল্টাছড়ি বন কর্মকর্তা এ এস এম মাহাবুব উল আলম জানান, পার্বত্যাঞ্চলে অধিক তামাক চাষের ফলে যেমনি নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, ঠিক তেমন উজার হচ্ছে বন; ভারসাম্য হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। আইনশৃঙ্খলা সভাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তামাক চাষ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করারও আহ্বান জানিয়েছি। এছাড়া কোনো তামাক চাষি যদি এ চাষ থেকে বের হয়ে অন্য চাষে আগ্রহ দেখায় আমরা তাকে সহযোগিতা করব। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কোম্পানিগুলোর অধিক প্রলোভনে কৃষকরা তামাক চাষ করছেন। তবে কৃষকদের এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বিকল্প ফসল চাষে সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা ও সহায়তার কথা জানান তিনি। লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তামাক চাষে সরকার কৃষকদের বারবার নিরোৎসাহী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই চাষে পরিবেশ ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। কৃষি অফিসের সহায়তায় কৃষকদের অন্য ফসল চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে, তামাক চাষ থেকে বিমুখ করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন।