দিশেহারা কৃষক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইটভাটার ধোঁয়ায় ২৪ একর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইটভাটার ধোঁয়ায় সাপুটিয়া বিলের জমির ক্ষতিগ্রস্ত ধান -যাযাদি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শাপলা অটো ব্রিকস লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ব্রিকস লিমিটেড নামে দু'টি বড় আকারের ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কারণে সরাইল এবং বিজয়নগর উপজেলার মধ্যবর্তী সাপুটিয়া বিলের কমপক্ষে ২৪ একর ইরি ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছরের একমাত্র ফসল ইরি এবং বোরো ধান হারিয়ে কৃষকেরা অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ না পেলে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। অসহায় কৃষকেরা এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সরেজমিন দেখা যায়, সাপুটিয়া বিলে বিস্তীর্ণ ধানি জমি। বিলের মধ্যে কিছু জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত। দূর থেকে দেখে মনে হবে এক একটি পাকাধানের জমি। আসলে দেখতে পাকা হলেও ধানের ভেতরে নেই পরিপক্ব চাল। স্থানীয় ভাষায় বলে চুছা ধান। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধারদেনা করে তারা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। ধানের শীষে ফুলও এসেছিল পর্যাপ্ত পরিমান। কিন্তু বিলের পাড়ে শাপলা অটো ব্রিকস্‌ লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ব্রিকস্‌ লিমিটেড নামে দু'টি বড় আকারের ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে তাদের স্বপ্নের সোনালি ফসল আজ জ্বলেপুড়ে অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জিলস্নু মাস্টার বলেন, বিগত বছরগুলোতে শাপলা অটো ব্রিকস্‌ এবং ইউনিয়ন ব্রিকস্‌ লিমিটেড নামে দু'টি অটো ইটভাটার মালিকপক্ষ দায় স্বীকার করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন। এ বছর শাপলা অটো ব্রিকস কর্তৃপক্ষ কিছুটা নমনীয় হলেও ইউনিয়ন ব্রিকস্‌ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি একেবারেই আমলে নিচ্ছে না। এ অবস্থায় তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর এবং বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কমনা করেন। মো. হাকিম মিয়া নামে অপর এক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, এই জায়গায় আগে আমরা চাষ করে ধান ঘরে নিয়ে যেতে পেরেছি। যখন থেকে এখানে ইউনিয়ন ব্রিকস দিয়েছে তখন থেকে আমরা আর ধান চাষ করতে পারি না। এই ভাটার ধোঁয়ার কারণে আমাদের ধান নষ্ট হয়ে যায়। এর আগে দুই তিনবার আমাদের তারা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তবে এ বছর আমাদের ফসল নষ্ট হলেও তারা ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না। তারা যদি ক্ষতি পূরণ না দেয় তাহলে আমরা কোথায় যাব। আমরা ক্ষতিপূরণের জন্য তাদের কাছে গেলে তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। এবার যদি তারা ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে আমরা মহাসড়কে বসতে বাধ্য হব। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার কাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'আমাদের সাপুটিয়া বিলের পাড়ে শাপলা অটো ব্রিকস্‌ লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ব্রিকস্‌ লিমিটেড নামে দু'টি বড় আকারের ইটভাটার ধোঁয়ার আমাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল আজ জ্বলেপুড়ে নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আমাদের সারা বছরে একটাই মাত্র ফসল হয়। সেই ফসল নষ্ট হলে কৃষকদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এখন যদি কর্তৃপক্ষ না দেখে তাহলে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। তিনি বিলের কমপক্ষে ২৪ একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন ব্রিকস্‌ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে কৃষকদের দাবির বিষয়টি যৌক্তিক এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন শাপলা অটো ব্রিকস্‌ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে শাপলা অটো ব্রিকস্‌ লিমিটেডের পরিচালক মেহেদী হাসান রনি জানান, 'আমরা কৃষকদের পাশে আছি। তাদের আশ্বাস দিয়েছি, আবারও বলছি, যদি আমাদের কারণে তাদের জমির কোনো ক্ষতি হয় তাহলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দেব। সেজন্য আমরা প্রথমে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা এনে তদন্ত করে দেখব। যদি আমাদের কারণে হয় তাহলে আমরা ক্ষতিপূরণ দেব।' অপরদিকে কৃষকদের দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান, জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ার জন্য যে চিমনি ব্যবহার করা হয় সেটির একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা রয়েছে। যদি চিমনি নিচে হয় তাহলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাপুটিয়া বিলের বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। কৃষকরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে অবশ্যই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।