ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারে কৃষক পর্যায়ে বিষমুক্ত টমেটোর বাম্পার ফলন

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
দিনাজপুরের হাবিপ্রবি'র রাসায়নিক কীটনাশক ও হরমোনমুক্ত টমেটো ক্ষেত পরিদর্শনে প্রফেসর ও গবেষকরা -যাযাদি
গত কয়েক বছর ধরে গবেষণায় আশানুরূপ ফলনের পর এবার কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে রাসায়নিক কীটনাশক ও হরমোনমুক্ত টমেটো চাষে বাম্পার ফলন পেয়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মো. আজিজুল হক। স্বল্প খরচে টমেটোর উচ্চ ফলন পেয়ে উচ্ছ্বসিত কৃষকরা। ইউনেস্কোর দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্সেস (টিডবিস্নউএএস) ও দ্য সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) যৌথ অর্থায়নে গবেষক ড. আজিজুল হক ও তার দল কোনো রকম রাসায়নিক কীটনাশক ও হরমোন ব্যবহার ছাড়াই খুবই স্বল্পমাত্রায় ইউরিয়া, ফসফরাস ও ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার করে টমেটো চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি টমেটো, আলু, বেগুন, মরিচসহ ধান, ভুট্টার মতো ফসলেও ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছেন। সম্প্রতি কৃষক পর্যায়ে ফলন পরীক্ষণ মাঠ পরিদর্শন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইআরটি)-এর পরিচালক প্রফেসর ড. এস এম হারুন-উর-রশিদ, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও গবেষক ড. আনোয়ারা আক্তার খাতুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সয়েল সায়েন্স বিভাগের লেকচারার রায়হানুল হক, প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারসাইটোলজি বিভাগের লেকচারার ডা. গাউসুর রহমানসহ কৃষক ও গবেষণা কার্যক্রমে কর্মরত শিক্ষার্থীরা। রাসায়নিক কীটনাশক ও হরমোন ছাড়া স্বল্পমাত্রায় ইউরিয়া, ফসফরাস ব্যবহারে টমেটোর উচ্চ ফলন দেখে অভিভূত হয়েছেন পরিদর্শকরা। এসময় কৃষকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন তারা। এবার কীটনাশক ও হরমোনের পরিবর্তে ব্যাকটেরিয়া স্প্রের মাধ্যমে টমেটো চাষ করেছেন দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক নুরুল ইসলাম শাহ। তিনি জানান, 'খুবই সুন্দর টমেটোর চাষ হয়েছে। আমার পাশের জমির কৃষকরা তাদের জমিতে সপ্তাহে একাধিকবার কীটনাশক দেওয়ার পরেও পোকা দেখা যায়, পোকা গাছ নষ্ট করে। সেই তুলনায় ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে আমাদের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। শীতকালীন ফসল হয়েও এই সময়ে টমেটোর জাতটি চাষ হচ্ছে এবং তা আরও দুই মাস স্থায়ী হবে। এই ব্যাকটেরিয়া টমেটোর পাশাপাশি আমি পাশে আমার মরিচ ক্ষেতেও ব্যবহার করেছি এবং অনেক ভালো ফলন পাচ্ছি। আমি এর আগেও মরিচ চাষ করেছি কিন্তু এত ভালো ফলন কখনোই পাইনি।' দিনাজপুর সদর উপজেলায় একই প্রক্রিয়ায় টমেটো চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন আরেক কৃষক আবসার আলী। আগামীতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টমেটো চাষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা। ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইআরটি)-এর পরিচালক প্রফেসর ড. এস এম হারুন-উর-রশিদ বলেন, ড. আজিজুল হক দীর্ঘদিন ধরে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে টমেটো চাষের ওপর সফলতার সঙ্গে গবেষণা পরিচালনা করছেন। তার এই গবেষণা দেশের কৃষির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কৃষক যেমন উচ্চ ফলন পাচ্ছেন, তেমনি ভোক্তারা বিষমুক্ত ফসল পাবেন, এতে স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত হবে। কৃষকের টমেটো মাঠ পরিদর্শন করে ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও গবেষক ড. আনোয়ারা আক্তার খাতুন বলেন, 'রাসায়নিক কীটনাশকমুক্ত টমেটো যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন। ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে উৎপাদিত এসব টমেটো সহজেই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। টমেটোগুলো থেকে পুষ্টিগুণসম্পন্ন বিভিন্ন ফুড প্রোডাক্টে প্রক্রিয়াজাত করা যেতে পারে। স্যারের এই গবেষণার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।'