শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

পানি শুকিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ, জরুরি ড্রেজিং দাবি

রাজস্থলী ও নানিয়ারচর (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পানি কমে যাওয়ায় হুমকির মুখে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ -যাযাদিপানি শুকিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ, জরুরি ড্রেজিং দাবি

শুষ্ক মৌসুমে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের পানির স্তর সর্বনিম্ন্ন পর্যায়ে নেমে আসায় কাপ্তাই বিলাইছড়ি নৌপথে বোট চলাচলে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন চালক এবং যাত্রীরা। বিশেষ করে বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি হতে ফারুয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কি.মি. নৌপথে পানির স্তর এতই নিচে নেমে গেছে যে, অনেক জায়গায় ছোট ছোট বোট দিয়ে চলাচলরত যাত্রীদের নামিয়ে টেনে বোট চালাতে হচ্ছে। লেকের অনেক জায়গায় হাঁটুর নিচে পানি নেমে গেছে।

মঙ্গলবার সকালে বিলাইছড়ি উপজেলার ১নং বিলাইছড়ি সদর ইউনিয়ন এবং ২নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কেরনছড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এই অংশে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর এতই কমে গেছে যে, ছোট বোট হতে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে সময় চালক ও যাত্রীরা একসঙ্গে বোটকে টেনে নিয়ে ওই অংশটুকু পাড় করছেন। শুধু কেরংছড়ি এলাকা নয়, এই নৌ পথে এসবেন, কেংড়াছড়ি, গাছকাটাছড়া, বিলাইছড়ি সদরসহ অনেক জায়গায় পানির স্বল্পতায় নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বড় বোটের পরিবর্তে ছোট ছোট বোট দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

এদিকে নানিয়ারচর প্রতিনিধি জানান, কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচাতে, মাছের বংশ বিস্তার বাড়াতে এবং বিদু্যৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে জরুরি ভিত্তিতে হ্রদের পুরো এলাকা ড্রেজিং করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ এবং অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া অন্য আজেবাজে প্রকল্প বাদ দিয়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করতে হবে। ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে মাইনীমুখ এলাকায় যে ড্রেজিং করছে তাতে কোনো ফল হচ্ছে না। কাপ্তাই এ জলবিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্রে সর্বনিম্ন্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

বর্তমানে এই গরমের মধ্যে দিনে-রাতে অস্বাভাবিকভাবে লোডশেডিং দিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে। যখন পূর্ণ বিদু্যৎ উৎপাদন হয় তখন রাঙামাটির জন্য ১৫ মেগাওয়াট বিদু্যৎ দেওয়া হতো। বাকিগুলো দেওয়া হতো জাতীয় গ্রিডে। বর্তমানে রাঙামাটির জন্য ১৫ মেগাওয়াট দেওয়া হচ্ছে না কেন এই প্রশ্ন স্থানীয়দের। বর্তমানে খাল বরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনগণ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে রাঙামাটি লংগদু বাঘাইছড়ি রুটে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। লংগদু বাঘাইছড়ি নৌপথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। লংগদু পর্যন্ত হ্রদ এলাকায় অনেক স্থানে ছোট-ছোট চর সৃষ্টি হচ্ছে বোট পর্যন্ত আটকে যাচ্ছে। বাঘাইছড়ি থেকে আগে রাঙামাটি বাস সার্ভিস চালু ছিল। বর্তমানে পিকআপ সার্ভিস চালু করেছে, যা বিপজ্জনক ও অপ্রতুল। বাস সার্ভিস চালু করা জরুরি। নানিয়ারচর রাঙামাটি নৌপথ অচল। তবে সড়ক যোগাযোগ থাকায় তেমন সুবিধা হচ্ছে না। লংগদু নানিয়ারচর সড়ক নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।

এছাড়া লংগদু বাঘাইছড়ি সড়কের সুয়ারিপাতাছড়া ব্রিজটির কাজ দ্রম্নত শুরু করা গেলে বাঘাইছড়ি যাত্রীদের অনেক উপকারে আসবে। রাঙামাটি জুরাছড়ি কাপ্তাই জুরাছড়ি নৌপথ অনেকদিন যাবৎ ভরাট হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বরকল ছোট হরিনা রুটে বরকল পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করলে মাঝেমধ্যে আটকে যায়। রাঙামাটি বরকল ঠেগামুখ পর্যন্ত দ্রম্নত ড্রেজিং করা না গেলে ঠেগামুখ স্থলবন্দর মুখ দেখবে না। স্থলবন্দর চালু না করা গেলে ভারত বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদু্যৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। ড্রেজিং করে পানি ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করে পানি স্বাভাবিক করতে হবে।

১০-১৫ বছর পূর্বে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ব্যবস্থা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তীতে স্থগিত করা হয়েছে। এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপ্তাই হ্রদে হাজার হাজার কোটি মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে এবং ৪০-৫০ হাজার জনবলের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। এছাড়া নৌ চলাচলের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিকের জীবন জীবিকা এ হ্রদের ওপর নির্ভর করে।

নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে বড় কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রম্নত ড্রেজিং করা অত্যন্ত জরুরি। তবে এ লেকের কিছু অংশ নামে মাত্র ড্রেজিং করা হলেও তা ঠিকমতো কাজ হয়নি। কাপ্তাই লেকের স্থায়ীভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ড্রেজিং অতীব জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে