আজকের যায়যায়দিন

ইতিহাসখ্যাত মধুপুর শালবনে প্রচন্ড দাবদাহে বণ্যপ্রাণীদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। চলছে ব্যাপক দাবদাহ। গাছপালা কমে যাওয়ায় বনের পরিবেশ আগের মতো নেই। পরিবেশ বিদ্বেষী আগ্রাসী গাছ লাগানোর ফলে দিন দিন পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে শালবন। আর সেসব জায়গায় সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে গাছ লাগানো হচ্ছে।

শালবনের লাল মাটির মধুপুর বনের পরিবেশ সম্মত গাছ হচ্ছে শাল, সেগুন, জারুল, আমলকি, হরীতকীসহ নানা দেশি প্রজাতি। আজুলি গাছের আজ দেখা মেলে না। অধিক ছায়া সমৃদ্ধ গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে হাঁপিয়ে উঠে বনের পরিবেশ। বনের মধ্যে সামাজিক বনায়নে বিদেশি প্রজাতির গাছ লাগানোসহ আনারসের চাষে ঝুঁকে পড়ার কারণে পরিবেশ আরও বিপন্ন হচ্ছে। কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব আনারস কলাসহ বিভিন্ন ফল ফসলের বাগানে রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ আরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শালবনের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা জলাশয়গুলোও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ভূমি খেকোরা এসব জলাশয় ভরাট করে কৃষিরাজ্যে পরিণত করছে। জলাশয়গুলোতে সারা বছর পানি থাকত। বন্যপ্রাণীরা এ বনের জলাশয়ে জলের চাহিদা মেটাত। গোসল করাসহ বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ লক্ষ করা যেত। জলাশয়গুলো ভরাটের ফলে এখন আর সারা বছর পানি পাওয়া যায় না। ফলে পানি সংকটে কষ্ট করছে বন্যপ্রাণীরা। বনের খাদ্য বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। জলাশয় বিলীন হচ্ছে। গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে বনের পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। এ সময়ে দেশে চলমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কষ্টের মাত্রা বেড়ে গেছে প্রাণিকুলে।

গাছাবাড়ি গ্রামের আব্দুস ছাত্তার (৪৩) জানান, মধুপুর বনের অভ্যন্তরে চৌরাবাইদ, মুনারবাইদ, গুইলমারি, জিকুশি, শইলমারি, দিগলাকোনাসহ অনেক জলাশয় ছিল। সেখানে সারা বছর পানি থাকত। বনের পশুপাখি গোসল করত। পানি পান করত। এখন এসব বাইদ বা জলাশয় ভরাট ও খনন করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে পানীয় জলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ আদিবাসী কালচারাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, এক সময় মধুপুর বন গহীন অরণ্য ছিল। প্রচুর ঝোপঝাড় ছিল। ঝোপঝাড়ে পশুপাখি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেত। বনের মধ্যে জলাশয়ের পানিতে চলত পশুপাখিদের জীবন। প্রাকৃতিক বন উজাড় অপরদিকে সামাজিক বনে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এজন্য দাবদাহে বন্যপ্রাণীদের কষ্ট বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বন বাড়াতে হবে। সামাজিক বনায়ন বন্ধ করা দরকার।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, দিন দিন বন উজাড়ের ফলে বন্যপ্রাণীদের খাবার কমে গেছে। পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। পশুপাখি আশ্রয় ও খাদ্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। বৃষ্টি কমে যাচ্ছে। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করা দরকার। বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশরে ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে হবে।

সহকারী বন সংরক্ষক (টাঙ্গাইল উত্তর) আশিকুর রহমান বলেন, মধুপুর মূলত উঁচু জায়গা, তারপরও জাতীয় উদ্যানের গড়গড়িয়া বনবিথী রেস্ট হাউজের পাশে জলাশয়ে পানি রয়েছে। এখানে বানররা পানি খেয়ে থাকে। তার মতে, পানীয় জলের সমস্যার চেয়ে খাদ্য সমস্যা বেশি। বনের জায়গা দখলের ফলে বনের পশুপাখিদের খাদ্য কমে গেছে। মধুপুর বনের বন্য পশুপাখিরা অনেকাংশে ভালো আছে বলে তিনি মনে করেন।