উপজেলা পরিষদ নির্বাচন :তিন জেলায় ১৫ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও নাসিরগর, পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও নাসিরনগরে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আট প্রার্থী তাদের মনোনয়রপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছয়জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। প্রত্যাহার করা প্রার্থীদের মধ্যে সরাইল উপজেলায় পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও নাসিরনগর উপজেলায় দুুইজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরাইল উপজেলায় ১১ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তাদের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আবেদন করে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ১১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ওই ১১ জনের মনোনয়নপত্রই বৈধ বলে ঘোষিত হয়। সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তারা হলেন- সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, জেলা মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম খন্দকার, উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ মিয়া বাবুল ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মো. নাজিম উদ্দিন ভাসানী। চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার কারণে এখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। তারা হলেন- সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শের আলম মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট মুখলেছুর রহমান, উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাজিব আহমেদ এবং মো. জামাল মিয়া। নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ছয়জন প্রার্থী। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ছয়জনের মনোনয়নপত্রই বৈধ হয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ফজলে ইয়াজ আল হোসাইন তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। চেয়ারম্যান পদে বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন পাঁচজন প্রার্থী। তারা হলেন- নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ.টি.এম মনিরুজ্জামান সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রোমা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়, আওয়ামী লীগের সমর্থক প্রমোদ রঞ্জন সূত্রধর এবং উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমরাও খান। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সামদানি ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন মিয়া পাঠান। এ ব্যাপারে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, নাসিরনগরে চেয়ারম্যান পদে একজন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাবনার তিনটি উপজেলায় মোট চারজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এর মধ্যে দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা ও পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল সোমবার। এদিন পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর এই তিন উপজেলার মধ্যে শুধু সাঁথিয়া উপজেলা থেকে চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তারা হলেন- চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা জামায়াতের আমির মোখলেছুর রহমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি রবিউল করিম হিরু। এ ছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আনিসুর রহমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শিরীন আক্তার তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তবে এর মধ্যে আলোচিত বেড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই সাবেক মেয়র ও বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সভাপতি আব্দুল বাতেন এবং ভাতিজা বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুল কাদের সবুজ তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এর বাইরে বেড়া ও সুজানগর উপজেলার আর কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তবে, এর আগে মনোনয়নপত্র বাছাইকালে বেড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আমিনপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বাবুর মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই তিন উপজেলায় এখন বৈধ প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে ১৪ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে বেড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আটজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন। সাঁথিয়া উপেজলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং সুজানগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুইজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী রয়েছেন।
হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন বলে জানা গেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২২ এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ঐদিন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হাসান রাজিব, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. তামজিদ উলস্নাহ প্রধান লিল্টু ও নির্দলীয় রাকিব হাসান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন বলে উপজেলা নির্বাচন অফিস বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানা যায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ে আটজনের প্রার্থিতা বৈধতা পায়। বৈধ প্রার্থীর ছয়জনই সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ পন্থী, একজন বিএনপিপন্থি ও একজন রয়েছেন অরাজনৈতিক। মনোনয়ন বাতিল হওয়া একমাত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. সেলিম মোলস্না প্রার্থিতা ফেরত পেতে আপিল করেও তার বৈধতা মেলেনি। এই উপজেলা থেকে সর্বশেষ চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগপন্থি বর্তমান চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. আজিম খাঁন, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সামছুল ইসলাম ও বিএনপিপন্থি একক প্রার্থী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাফিজা খাতুন জানান, চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। চূড়ান্ত তালিকায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আটজন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়াও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।