আজ ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা পস্নাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পার হলো। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই পা হারানো দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার গৃহবধূ রেবেকা খাতুনকে। দুই পা হারিয়ে নিজের জীবন নিয়ে ফিরে আসলেও, এখনো খোঁজ মিলেনি মা চান বানুর। দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগেই কথা হয়েছিল মা চান বানুর সঙ্গে, সেটিই ছিল শেষ কথা। শুধু চান বানুই নয়, ওই দুর্ঘটনায় রেবেকা খাতুনের পরিবারের ৫ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছিল। এর মধ্যে রেবেকার দাদি কোহিনুর বেগম, ফুফু, ফুফাত এক ভাই ও এক বোন, দাদি, ফুফু ও ফুফাত ভাই বোনের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও, রেবেকার মা চান বানুর মৃতদেহও পাওয়া যায়নি।
সেদিনের দুর্ঘটনায় সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তার। সেদিনের কথা মনে করে আজও কেঁদে ওঠেন রেবেকা। রানা পস্নাজায় আহত রেবেকা খাতুন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বারাইহাট এলাকার চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রেবেকা তার তিন বছরে ছেলে ও ৫ বছর বয়সি কন্যাসন্তানকে পাশে রেখে রান্না করছেন। তিনি যায়াযায়দিনকে বলেন, রানা পস্নাজা ধসের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন তিনি হাসপাতালে ছিলেন। পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় ১০ মাসের মতো হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। দুই পায়ে মোট আটবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় তিনি তার মা, দাদি ফুফু, ফুফাত এক ভাই ও এক বোনকে হারিয়েছেন।
রেবেকা সেদিনের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে বলেন, রানা পস্নাজা ভবন ধসের ঘটনার পর তার জ্ঞান ছিল না। দুই দিন পর জ্ঞান ফিরে এলে দেখতে পান পায়ের ওপর সিমেন্টের বিম চাপা, ঘুটঘুটে অন্ধকার জায়গায় পড়ে আছেন। তখন চিৎকার করলে কয়েকজন উদ্ধারকর্মী কাছে আসেন। কিন্তু তখনো তারা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। এ সময় উদ্ধারকর্মীদের তিনি তার স্বামীর মোবাইল নাম্বার দেন। পরে তার স্বামী এসে উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন। এরপর পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘ এক বছর তাকে চিকিৎসা নিতে হয়। তার বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে।
রেবেকা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। সেটি স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে আছে। সেই স্থায়ী আমানতের টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলছে। তাকে দেখাশোনার জন্য স্বামী বাইরে কাজ করতে পারেন না।'
এদিকে ছবি ছাড়া আর মায়ের কথা মনে করতে পারেন না রানা পস্নাজায় হারিয়ে যাওয়া ফুলবাড়ীর শাবানা বেগমের মেয়ে সোহনা আক্তার সাহানার। তার বয়স যখন দুই বছর তখনে রানা পস্নাজায় কাজ করতে গিয়ে চিরতরে হারিয়ে যান মা শাবানা বেগম। তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি, এখন মায়ের স্মৃতি বলতে কেবল ছবি।
রানা পস্নাজায় নিখোঁজ শাবানার স্বামী আতাউর রহমান যায়াযায়দিনকে বলেন, স্ত্রী শাবানা বেগম রানা পস্নাজায় পোশাক শ্রমিকের ও তিনি এনাম হাসপাতালে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন এক সঙ্গে কাজে বের হন, সেই যাওয়া ছিল শেষ যাওয়া। শাবানার এক ছেলে ও এক মেয়ে, ওই সময় ছেলেটির বয়স ছিল ৪ বছর ও মেয়েটির ছিল ২ বছর, এ কারণে মেয়েটি মায়ের স্মৃতি মনে করতে পারে না।
দিনাজপুরে যেসব শ্রমিক রানা পস্নাজার ঘটনায় আহত হয়েছিলেন তাদের চিকিৎসা প্রদান ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারের নির্দেশক্রমে কাজ করে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার-সিডিসি।
সিডিসির ও বিজিএমইএর তথ্য মতে, রানা পস্নাজায় কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর জেলার ৭১ শ্রমিক তার মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলার দুইজন।