সমস্যায় জর্জরিত কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাট
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার আওতাধীন কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে বাড়তি ভাড়া আদায় ও খাস কালেকশন নিয়ে স্থানীয় লোকজন, নৌকার মাঝি, যাত্রী ও ইজারাদারদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এসব ঘাটের ইজারাদাররা নিয়মনীতি না মেনে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে বলে জানা গেছে। ইজারাদার বা খাস কালেকশন আদায়কারী ও নৌকার মাঝিদের সঙ্গে সৃষ্ট এ ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেও সমাধান না হওয়ায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চলতি বছর হাইকোর্টের আদেশে চসিকের ঘাট ইজারা স্থগিত হওয়ায় এসব ঘাটে খাস কালেকশন চলছে। প্রতিদিন এসব ঘাট দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ ঘাট পারাপার হয়।
জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার কোল ঘেঁসে নদী পর হয়ে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতের জন্য ২০টি ঘাট রয়েছে। ঘাটগুলো হলো- পতেঙ্গা ১৫নং ঘাট, সল্টগোলা ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, নয়ারাস্তা পাকা পুল ঘাট, সদরঘাট, ফিশারিঘাট, নতুনঘাট, এয়াকুবনগর লইট্যা ঘাট, পতেঙ্গা ১৪নং ঘাট, গুচ্ছগ্রাম ঘাট, ১১নং মাতব্বর ঘাট, ১২নং তিনটিংগা ঘাট, ৭নং রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসংলগ্ন ঘাট, ৯নং বি ও সি ঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, চাক্তাই খালের পাশে পান ঘাট হতে গাইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাট, চাক্তাই ঘাট ও চাক্তাই ৫টি লবণঘাট। এসব ঘাটের ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু ঘাটের কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় যাত্রীদের উঠানামায় বিভিন্ন সময় ঘটে দুর্ঘটনাও। এ বছর হাইকোর্টে মামলা করায় চলতি বছর সিটি করপোরেশন নতুন করে ইজারা দিতে পারেনি। তাই এখন খাস কালেকশন চলছে এসব ঘাটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌকার মাঝিরা জানান সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে অর্থের বিনিমিয়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে খাস কালেকশনের দায়িত্ব দেওয়ায় এসব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সিটি করপোরেশন প্রজ্ঞাপনে সল্টগোলা ঘাটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি যাত্রীর ভাড়া (যন্ত্রচালিত লাইফ বোটে) ১০ টাকা, রিজার্ভ ভাড়া ২২০ টাকা, আরোহীসহ ব্যক্তি গাড়ি ৪ টাকা, গরু বা মহিষ প্রতিটি ৪ টাকা, ভেড়া-ছাগল-কুকুর বা অন্যান্য জন্তু ১ টাকা ও প্রতি মণ বোঝা বা ইহার কম ভাড়া ৫০ পয়সা। এভাবে অন্যান্য ঘাটেও ভাড়া নির্ধারণ রয়েছে। কিন্তু চসিকের এই ভাড়ার তালিকা কোনো ঘাটে টাঙানো হয়নি। এই সুযোগে ইজারাদার বা খাস কালেকশনকারীরা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। এতে করে ঘাটে স্থানীয় ও খাস কালেকশন আদায়কারীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
গত ১৫ এপ্রিল আবসার উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জুলধা ডাঙ্গারচর ঘাটে খাস কালেকশন করতে আসলে দু'পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় ঘাটে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায় পরে কর্ণফুলী থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঘাট পারাপারের যাত্রী আবদুস সালাম ঈদকে কেন্দ্র করে ১০ টাকার ভাড়া এখনো ২০ টাকা নিচ্ছে, দেখার কেউ নেই।
সল্টগোলা ডাঙ্গারচর পাটনীজীবী সমবায় সাধারণ সম্পাদক সভাপতি মনির আহমদ বলেন, 'আমরা ৪০ থেকে ৫০ জন মাঝি এখানে আছি, খাস কালেকশনের নামে ইজারাদাররা ইচ্ছামতো টাকা আদায় করে নিয়ে নেয়। কিন্তু ঘাটের কোনো সমস্যা তারা সমাধান করে না।'
জানতে চাইলে পতেঙ্গা ১৫নং, ১৪নং ও ১১নং মাতব্বর ঘাটের ইজারাদার আবদুল শুক্কুর বাড়তি ভাড়া আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। ভাড়ার তালিকা ঘাটে টাঙানো না হলেও আমার অফিসে আছে।