শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

কৃষিতে অশনিসংকেত খরা-অনাবৃষ্টি

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
মেহেরপুরের গাংনীতে প্রচন্ড তাপদাহে সেচযন্ত্রের পানিতে শিশুদের শিতল হওয়ার চেষ্টা -যাযাদি

মেহেরপুরের গাংনীতে প্রখর রোদে পুড়ছে কৃষকের মাঠ। অনাবৃষ্টি ও খরার হাত থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকের সেচ সুবিধা ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। দাবদাহে ফসলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে। আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তবে ফলন বিপর্যয় ঠেকাতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা মূলত কৃষি ভিত্তিক এলাকা। এখানকার মাঠে ধানসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল ও সবজির আবাদ রয়েছে। কিন্তু তীব্র গরমসহ রোদের তাপে পুড়ছে বিস্তীর্ণ মাঠের নানা ধরনের ফসল। খরার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচকাজে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। অতিরিক্ত খরার কারণে সেচ কাজে বেড়েছে ব্যয়। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সেচ লাগছে জমিতে। কৃষি কাজে শ্রমিকও লাগছে বেশি। গরমের কারণে মাঠে ঠিকভাবে কাজও করতে পারছেন না কৃষকরা। কয়েক দিনের মধ্যে ঘরে উঠবে বোরো ধান। এছাড়া প্রচন্ড দাবদাহে শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে আম ও লিচুর গুটি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গাংনীতে ৮ হাজার ২৮০ হেক্টর ধান, এক হাজার ২৫৫ হেক্টর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৯৫০ হেক্টর আম, ১২৫ হেক্টর লিচু, ৪০ হেক্টর কাঁঠাল ও ৪ হেক্টর জাম বাগান রয়েছে। অন্যদিকে পাটসহ অন্য ফসল বপন করা হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ক্ষেতের ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি অফিস।

গাংনীর মানিকদিয়া মাঠের ধানচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, প্রচন্ড গরমে মাঠে কাজ করতে পারছেন না। সকাল ১১টার পর রোদের তাপ বেড়ে যাচ্ছে। বেশি শ্রমিক লাগছে। ৫ জনের কাজ ১০ জন শ্রমিক দিয়ে করাতে হচ্ছে। মাটির নিচ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না পানির লেয়ার। যে ক্ষেতে এক ঘণ্টায় সেচ করা শেষ হয় ওই জমিতে লাগছে অন্তত তিন ঘণ্টা। এমন দাবদাহ অব্যাহত থাকলে সব ধরনের ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ধানচাষি সহড়াবাড়িয়ার শামসুল ইসলাম জানান, তিনি খামারের মাঠে ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করছেন। বর্তমানে মাঠে রয়েছে বোরো ধান। প্রতিটি জমিতেই ধানে ফুল রয়েছে। কিছু ধান দুগ্ধ আর কিছু ক্ষীর অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় ক্ষেতে হিটস্ট্রোক দেখা দিতে পারে। বোরো ধান পর্যাপ্ত পানি না পেলে চিটা হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তার চার বিঘা জমিতে আম ও লিচু বাগান রয়েছে। আম ও লিচুসহ অন্য ফলে গুটি রয়েছে। তা ঝরে পড়ছে। ফলনেও বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

সবজি চাষি সাহারবাটির আকরামুল জানান, বর্তমানে মাঠে বিভিন্ন ধরনের সবজি রয়েছে। গ্রীষ্মকালীন এ সবজিতে এমনিতেই সেচের পানি দিতে হয়। খরচও বেশি। কিন্তু চলমান দাবদাহে জমিতে সেচ দেওয়ার পরও কোনো পানি থাকছে না। রাতে সেচ দিলে সকালে পানি শুকিয়ে যায়। ক্ষেত থেকে সবজি তুলে আড়ত পর্যন্ত নিতে সবজি শুকিয়ে কমে যায়। শ্রমিকও লাগছে বেশি।

আম বাগান মালিক কাষ্টদহ গ্রামের শরিফুল জানান, গেল বছর গরমে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ বছর সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করা হয়েছিল। কিন্তু দেরিতে মুকুল আসে। এখন আমের গুটি রয়েছে। অনাবৃষ্টি আর গরমে গুটি শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। তার হিসাবে বাগানের ৩০-৩৫ ভাগ গাছের গুটি ঝরে পড়েছে। গুটি ঝরা ঠেকাতে সেচ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এবার অনেক বেশি লোকসান গুনতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল ৫ দিন ধরে চলছে বৈরী আবহাওয়া। ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ২২ এপ্রিল ৪০.২ ডিগ্রি, ২১ এপ্রিল দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০ এপ্রিল ৪২.৪ ডিগ্রি, ১৯ এপ্রিল ৪১.৫ ডিগ্রি, ১৮ এপ্রিল ৪০.৪ ডিগ্রি, ১৭ এপ্রিল ৪০.৮ ডিগ্রি ও ১৬ এপ্রিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। প্রচন্ড গরমের সঙ্গে চলছে গরম বাতাস, যা গেল বছরের তুলনায় বেশি। ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর এলাকায় হিট অ্যালার্ট জারি করে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষায় জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে। ধানের শিষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই দুই থেকে তিন ইঞ্চি দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। আমগাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে গাছের শাখা-প্রশাখায় পানি স্প্রে করা যেতে পারে। সবজির জমিতে আগামী এক সপ্তাহে মাটির ধরন বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী দুই থেকে তিনটি সেচের ব্যবস্থা করা জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে