বৈশাখের শুরু থেকে তাপদাহে পুড়ছে গোটা রাজশাহী অঞ্চল। ঠাঠা রোদে তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে উঠেছে পথ-ঘাট। টানা তাপদাহের কারণে রাজশাহীতে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এরই মধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ২০ শতাংশ গুটি ঝরে পড়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, খরা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে গুটিও ঝরতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে বাগানে সেচ দিতে হবে ঘন ঘন।
রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম বলেন, গত ১৭ এপ্রিল থেকে রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেদিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮ এপ্রিল ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ১৯ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং ২০ এপ্রিল তা বেড়ে দাঁড়াও ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রোববারও তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
নগরীর খড়খড়ি বাইপাসের আমচাষি শরিফুল ইসলাম কাদু বলেন, গরমে আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে আর হলুদ আকার ধারণ করে ঝরে পড়ছে। মৌসুমের শুরুর দিকে বেশ ভালো মুকুল এলেও ঘন কুয়াশা ও হালকা বৃষ্টিতে প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর যে খরা চলছে তাতে গাছে আম ধরে রাখা কষ্টকর।
কাশিয়াডাঙ্গার এনতাজ আলী বলেন, আমের জন্য এ সময় বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার আমের আকার বেশ ছোট হবে। সে সঙ্গে উৎপাদনও কমবে। গাছে আম না থাকায় মৌসুমের শুরু থেকে দাম চড়া থাকবে।
আমের গুটি রক্ষায় প্রতিদিন পানি স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'গত বছর আমের অন ইয়ার থাকলেও এবার অফ ইয়ার, ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমের ফলন কমবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। গুটি রক্ষায় সেচ প্রয়োজন।'
সেচের ব্যবস্থা না থাকলে অন্তত সকালে বা সন্ধ্যায় গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ডক্টর শফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এখান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। গত বছর এ অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়েছিল।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোছা. উম্মে সালমা বলেন, 'সব উপজেলায় খরা মোকাবিলায় আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা আম চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।'