দেলদুয়ারে বাঁশ শিল্পের সুফলে অনেকেই স্বাবলম্বী
প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বাঁশশিল্পকে আঁকড়ে ধরে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। উপজেলার বর্ণী, বারোপাখিয়া, প্রয়াগজানি, পরাইখালি ও কোপাখিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে চলছে বাঁশশিল্পের কাজ। এ শিল্পে জড়িত কারিগররা তাদের পূর্বপুরুষের পেশাকে বুকে লালন করে মন বসিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তারা বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন আকর্ষণীয় বিভিন্ন পণ্য। এসব বাঁশ শিল্পজাত পণ্যের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও বাজারে চাহিদা রয়েছে বলে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বর্তমানে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে বাঁশশিল্পের সুফলে আজ অনেকেই সচ্ছলতার মুখ দেখছেন।
সময়ের সঙ্গে মানুষের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে। সে কারনে বাঁশশিল্প বর্তমানে মাথাইল বা জোয়াল তৈরির কাজে থেমে নেই। এ অঞ্চলের কুটির শিল্পীরা বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন যুগের চাহিদা অনুসারে গৃহে ব্যবহার উপযোগী আকর্ষণীয় বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্প, ফলের ঝুঁড়ি, ফুলদানি, টে, বাসকেট, চালুন, ডালাসহ বিভিন্ন নকশার প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য। বাঁশ দিয়ে তৈরি শৌখিন এসব পণ্য অনেকেরই নজর কাড়ছে।
জানা গেছে, উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের বর্ণী গ্রামে সবচেয়ে বেশি বাঁশশিল্পের কাজ হয়। সে কারণে বর্ণী গ্রাম ঘিরে গড়ে উঠেছে ইমরান ব্যাম্বো হ্যান্ডক্রাফটস্, মা বাবা হ্যান্ডক্রাফট, নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্র্যাফ্ট ও জাকির আহমেদ কুটির শিল্প নামের চারটি বাঁশ শিল্পজাত পণ্যের কারখানা। সেখানে প্রতিদিন চলছে বাঁশ শিল্পজাত পণ্য তৈরি ও বাজারজাত প্রক্রিয়াকরণের কাজ। প্রতিটি কারখানায় পণ্যের মান উন্নয়নে কাজ করছেন নিজস্ব কারুশিল্পীরা। তারা এ শিল্পে জড়িত কারিগরদের দিকনির্দেশনা দিয়ে রুচিশীল সব পণ্য তৈরি করে থাকেন। এসব পণ্য দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আড়ংসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইন শপেও বিক্রি করা হচ্ছে এ অঞ্চলের বাঁশশিল্পের আকর্ষণীয় বিভিন্ন পণ্য।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বর্ণী গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্য। উপজেলার বেশির ভাগ বাঁশ শিল্পের কাজ বর্ণী গ্রামে হয়ে থাকে বলে সেখানে চারটি বাঁশ শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে বাড়ি বাড়ি তৈরি এসব পণ্য গ্রামের বাঁশ শিল্প কারখানা মালিকদের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়।
শিল্পের হাতের স্পর্শে অনেক দরদ দিয়ে আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয় বলে এ অঞ্চলের বাঁশশিল্প পণ্যের বাজার চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। অথচ দক্ষ কারিগররের অভাবে বাজারের চাহিদার জোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় কারখানার মালিকদের।
বর্ণী গ্রামে নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্র্যাফট্ কারখানর কারিগর হারুন মিয়া জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানেও এ শিল্পের কাজ করেই তার সংসার চলে। এছাড়া তাদের তৈরি পণ্যর বাজার চাহিদা ভালো রয়েছে বলেও জানান।
একই কারখানার কারিগর মনিরা বেগম জানান, প্রায় ৩ বছর ধরে কাজ করছেন। আর ওই কারখানায় কাজ কাজ করে সন্তান লালন-পালনসহ সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন।
নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্র্যাফট্ কারখানার মালিক মো. নূরন্নবী বলেন, এ অঞ্চলের বাঁশ শিল্প পণ্যের ভালো বাজার চাহিদা রয়েছে। অথচ দক্ষ কারিগররের অভাবে অনেক সময় বাজারের চাহিদার জোগান দিতে হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, এ শিল্পকে গতিশীল রাখতে সরকারিভাবে কারিগরদের উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা এবং বিদেশ থেকে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি করা প্রয়োজন। তাহলে এ শিল্পের উন্নয়ন ত্বরানিত হয়ে দ্রম্নত এলাকায় সৃষ্টি হতো আরও কর্মসংস্থান। উপজেলায় দিন দিন কমে যেত বেকার নারী-পুরুষের সংখ্যাও।
মা বাবা হ্যান্ডক্রাফট কারখানার মালিক ও কারুশিল্পী মো. শাহাআলম জানান, বাল্যকাল থেকেই তিনি বাঁশশিল্পে তৈরি পণ্যের নকশা ও মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আর পণ্য তৈরির কাজ করেন কারিগররা।
ডুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস মিয়া জানান, বর্তমান সরকার কুটির শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পের আরও উন্নয়ন হবে।