কুয়াকাটায় চলছে রাখাইনদের 'সাংগ্রাই' জলকেলি উৎসব

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর পর্যটননগরী কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে রাখাইনদের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী "সাংগ্রাই" জলকেলি উৎসব -যাযাদি
প্রতি বছরের ন্যায় পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে রাখাইনদের নতুন বছর ১৩৮৬-কে স্বাগত জানাতে পটুয়াখালীর পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী 'সাংগ্রাই' জলকেলি উৎসব। কুয়াকাটা সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব। এ সময় কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় রাখাইন পুরনো বছর ১৩৮৫ সাল বিদায় ও নতুন বছর ১৩৮৬-কে বরণে কুয়াকাটার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন রাখাইন মহিলা মার্কেট মাঠে ৩ দিনব্যাপী এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে গান, নাচ, জলকেলিতে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে রাখাইন তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষ। এর আগে বেলা ১১টায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। রাখাইন তরুণীদের নৃত্য পরিবেশনা শেষে সেখানে তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসায় সিক্ত জল একে অপরের গায়ে ছিটিয়ে পালন করা হয় রাখাইন সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় এ উৎসব। অনুষ্ঠান আয়োজনে রাখাইদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার, পৌর কাউন্সিলর শহীদ দেওয়ান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালের তালুকদার, কারিতাস বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক ফ্রান্সিস ব্যাপারিসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কেরানিপাড়ার মাতুব্বর উচান চিন মাতুব্বর। রাখাইন তরুণ লু চিং বলেন, 'পুরনো বর্ষকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসবের রীতি। এ উৎসব ঘিরে ৩ দিনব্যাপী জলকেলি ছাড়াও বাড়িতে বাড়িতে রান্না হচ্ছে নিজস্ব খাবার। পুরনো বছরের সব গস্নানি ও দুঃখ জলে মুছে নতুনভাবে জলে জলে পরিশুদ্ধির জন্য এই উৎসব।' রাখাইন তরুণ অং নয় তালুকদার বলেন, 'আমাদের রাখাইন নতুন বছর আজকে থেকে শুরু হয়েছে, সেই উপলক্ষে আমরা সাংগ্রাই জলকেলি উৎসব করছি। শত শত বছর ধরে আমাদের রাখাইন সম্প্রদায় এই অনুষ্ঠান পালন করে আসছি। এই উৎসব আমাদের রাখাইন তরুণ-তরুণীসহ সবার কাছে বড় ধরনের একটি ধর্মীয় উৎসব।' কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, 'রাখাইনদের ৩ দিনের জলকেলি উৎসব সার্বিক সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। জলকেলি উৎসবটি রাখাইনদের হলেও এটি কালক্রমে এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।' কুয়াকাটা রাখাইন পলস্নীর তরুণী পুলিশ কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর ম্যান-মে বলেন, 'জলকেলি উৎসব আগে প্রত্যেকটি পাড়ায় অনুষ্ঠিত হতো। এখন আর্থিক সংকটের কারণে সব পাড়ায় অনুষ্ঠিত হয় না। এ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। আমার বিভিন্ন মাধ্যমে অনুদান নিয়ে কুয়াকাটায় আয়োজন করছি। প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান আয়োজন করব সেই প্রত্যাশা রাখি। এটি মূলত আমাদের রাখাইন সম্প্রদায়ের অন্যতম একটি ঐতিহ্য। তাই এটি ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের।' এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, 'রাখাইনদের এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি শত বছর ধরে এ উপকূলের বিভিন্ন রাখাইন পাড়াগুলোতে চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরেও সুন্দর আয়োজন করেছে তারা। তবে আগামী বছর উৎসবটি সমুদ্র সৈকতে আয়োজন করতে প্রস্তাব রাখা হবে উপজেলা প্রশাসন। যাতে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা এ উৎসব উপভোগ করতে পারেন।'