মুক্তিযুদ্ধের এক মাইলফলক
সাঁথিয়ার ঐতিহাসিক 'ডাববাগান' দিবস আজ
প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
আজ ১৯ এপ্রিল। ঐতিহাসিক পাবনার সাঁথিয়ার ডাববাগান দিবস। একাত্তরের ১৯ এপ্রিলের ডাববাগানের যুদ্ধ আজও ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়নি। ডাববাগানের এই যুদ্ধ ছিল একাত্তরের এক মাইলফলক। নগরবাড়ী ঘাট ছেড়ে পশ্চিম দিকে কাশিনাথপুর পেরিয়ে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাইকরহাটি গ্রামের (বর্তমান নাম শাহীদনগর) ডাববাগান নামক স্থানে একাত্তরের ১৯ এপ্রিল হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়।
একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার পর থেকেই সমগ্র বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের আরও সংগঠিত করে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। হানাদার বাহিনী কর্তৃক বন্দি হওয়ার প্রাক্কালে একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর তার আহ্বান ও নির্দেশে বাঙালিরা দেশব্যাপী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। ঢাকা থেকে আসা হানাদার বাহিনী উত্তর জনপদের এই স্থানে মুক্তিসেনাদের সম্মুখে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মুক্তিসেনাদের পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ইপিআর সুবেদার গাজী আলী আকবর (বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার শান্তিডাঙ্গা গ্রামে)। এ যুদ্ধে বেশির ভাগ যোদ্ধা ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী, আনসারসহ অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই রাস্তা দিয়ে পাকিস্তানি সেনারা নগরবাড়ী থেকে বগুড়া যাওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে মুক্তিসেনারা ডাববাগানে অবস্থান নেয়। প্রথমত পাকিস্তানি সেনারা সম্মুখযুদ্ধে টিকতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতি স্বীকার ও হতাহতের পর পিছু হটে নগরবাড়ী ফিরে যায়। যুদ্ধে প্রায় ৫০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এদিকে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন ইপিআর হাবিলদার মমতাজ আলী, হাবিলদার আ. রাজ্জাক, নায়েক হাবিবুর রহমান, সিপাহি এমদাদুল হক, সিপাহি ঈমান আলী, সিপাহি রমজান আলীসহ আরও অনেক ইপিআর সদস্য। পাকিস্তানি বাহিনী ওই সব শহীদের দেহ এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেয়।
পরে পাকিস্তানি বাহিনী শক্তি বৃদ্ধি করে রাতে আবার আক্রমণ করে। তারা গ্রামবাসীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। নির্বিচারে গুলি চালায় নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর। লোকজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে শ' শ' স্বাধীনচেতা গ্রামবাসীকে। এদের মধ্যে করমজার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আফাজ ডাক্তার, আ. লতিফ, শেখ কাজেম আলী, খোয়াজ শেখ, পিয়ার মন্ডল, জাকের আলী শেখ, সৈয়দ আলী মোলস্না, জগনারায়ণ বিশ্বাস প্রমুখ।
যে গাব গাছটির কাছে নিয়ে এসে গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল, সে গাব গাছটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরও আছে সেই ডাববাগান। এলাকাবাসী জায়গাটির নতুন নামকরণ করেছে 'শহীদ নগর'। শহীদনগরে রয়েছে ইপিআরদের 'গণকবর'। এখানে ঘুমিয়ে আছে শ' শ' মুক্তিপাগল গ্রামবাসী। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এখানে 'বীর বাঙালি' নামে একটি 'স্মৃতিসৌধ' গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবার দিবসটি পালনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।