বোরো ধানের ঘ্রাণে মতোয়ারা বিস্তীর্ণ হাওড় এলাকা। নবান্ন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। বৈশাখের শুরুতেই গোলায় ধান তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কানলার হাওর এলাকা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। তবে শ্রমিক সংকট ও উচ্চ মজুরির কারণে এখনো হাওড়ে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়নি। তাই সন্তান-সন্তুতি নিয়ে নিজেরাই ধান কাটছেন প্রান্তিক ধান চাষিরা।
দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বোরো ধানচাষি সামসু মিয়া (৬০)। দুই সন্তান সমুজ আলী স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজির হোসেন (১৮) ও মুহিবুর রহমান মানিক সোনালী নূর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনির হোসেন (১৭)। দুই সন্তানকে নিয়ে ভরদুপুরে কানলার হাওরে ধান কাটতে দেখা গেছে সামসু মিয়াকে। আলাপকালে তিনি বলেন, 'ধান কাটার শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে গেছে। তাছাড়া সময়মতো শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়া ভালো থাকাবস্থায় সময়মতো ধান না কাটতে পারলে ঘরে ধান তোলা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শ্রমিকের অপেক্ষা না করে সন্তান-সন্তুতি নিয়ে নিজেরাই ধান কাটতে নেমেছি।'
বাবার সঙ্গে ধান কাটতে এসে বেশ উৎফুলস্ন সহোদর নাজির হোসেন ও মনির হোসেন। তারা বলেন, 'ছোট্টবেলা থেকেই আমরা কৃষিকাজে অভ্যস্ত। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করি। এই রোদের মধ্যে ধান কাটা অনেক পরিশ্রমের কাজ হলেও আমাদের আনন্দ লাগে। নিজেদের চাষকৃত ধান আমরা নিজেরা কেটে আনন্দ পাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাবাকে ধান কাটায় সহযোগিতা করতে পারছি।'
একই গ্রামের বর্গাচাষি কাজল মিয়া বলেন, 'এবার প্রায় ১২০ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান চাষ করেছি। বেশি ভালো ফলন হয়েছিল। কিন্তু ইদুরের উপদ্রপ ও বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা হওয়ায় বেশকিছু ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
চাষি মুন্তাজ আলী বলেন, 'জমির প্রায় অর্ধেক ধান কাটা শেষ। এবার আগাম বন্যা না হওয়ায় চিন্তামুক্ত আছি। আশাবাদী শিগগিরই সব ধান কাটা শেষ হবে।'
দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, 'উপজেলায় এবার বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর। এরমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত উপজেলার ৪৪০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। কৃষকদের দ্রম্নত ধান কাটার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। কিছু জমিতে জলাবদ্ধতা রয়েছে।'