ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই পহেলা বৈশাখে নতুন ইজারাদার হাট হাতে পেয়েই যানজট কমানোর জন্য দুই দিন বাড়িয়ে সপ্তাহে চার দিন হাট বসানোর জন্য মাইকিন করে ঘোষণা দিয়েছেন। আগে থেকেই কলা হাট সপ্তাহে চার দিন থাকায় পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা সবজির হাটও দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইজারাদাররা।
হাট ইজারার নামে প্রতিবছর সরকারের কোষাগারে যেমন কোটি কোটি টাকা জমা হয়, তেমনি প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটেও ঢুকে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু জনসাধারণের ভোগান্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে ভোগান্তির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সরেজমিন রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কটি এমনিতেই অনেকটা ব্যস্ততম। নাটোর পর্যন্ত দুই লেন হওয়ায় এই রাস্তাটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মাঝে-মধ্যেই ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
ব্যবসায়ীরা জানান, মূল হাট সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও মঙ্গলবার। এখন শুনছি নতুন ইজারাদাররা সপ্তাহে চার দিন হাট বসাবে। শুক্র-শনি এবং সোম-মঙ্গলবার বসে কলার হাট। আর শনিবার ও মঙ্গলবার বসে মূল হাট। ফলে এই দুই দিন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীসাধারণ ও পথচারীদের।
হাটের কলেজ গেট থেকে একেবারে শিবপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে থাকে সেই ভোর থেকে। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলে আসছে এই হাটটি। এখন হাটে কৃষিপণ্য কেনা-বেচার পরিমাণ বেড়েছে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন। আবার ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু হাটের বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে একেবারে মহাসড়কের ওপরই বসে অধিকাংশ দোকানপাট এবং চলে কৃষিপণ্য কেনা-বেচার কাজ।
হাটের ভেতর দিয়ে দ্রম্নতগামী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহন চালাতে হয় খুব ধীরগতিতে। এরপরও অধিকাংশ সময় যানজটের কারণে যানবাহন আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেশ ট্রাভেলসের একটি বাসের চালক ইলিয়াস বলেন, 'এই রাস্তাটি এমনিতেই ব্যস্ততম রাস্তা। যানজট না থাকলে ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে চার ঘণ্টায় রাজশাহীতে পৌঁছানো যায়। কিন্তু যানজটের কারণে কোনো দিনই প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার আগে আমরা পৌঁছতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ' পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে হাটের এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। কিন্তু জায়গার সংকট থাকার কারণে দুই হাটের দিন ভিড় লেগেই থাকছে রাস্তার ওপর। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা মহাসড়কে যানজট এড়াতে সপ্তাহে দুই দিন হাট বাড়িয়েছি।
বানেশ্বর হাটের সাবেক ইজারাদার ওসমান আলী বলেন, আমরা নতুন করে আবার পুনরায় হাট পেয়েছি। যানজটের কারণে যাতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। তাই আমরা বানেশ্বর মহাসড়কে যানজট এড়াতেই সপ্তাহে চার দিন হাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, কে, এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, 'মহাসড়কের ওপর হাট বসার কথা না। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে হাট বসে আসছে, সেহেতু সবাইকে নিয়ে বসে এটা নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। আমি বিষয়টি নিয়ে দেখছি, কি করা যায়। আর আমরা এক বছরের জন্য হাট লিজ দিয়েছি, তারা সপ্তাহে কয়দিন হাট বসাবে, সেটি তাদের বিষয়।