পহেলা বৈশাখে নাসিরনগরে ৩শ' বছরের ঐতিহ্যবাহী 'শুঁটকি মেলা ও বিনিময় প্রথা'
প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কুলিকুন্ডা গ্রামে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী 'শুঁটকি মেলা ও বিনিময় প্রথা' অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলার নির্ধারিত দিন নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় এবার রোববার ও সোমবার ২ দিনব্যাপী বসে এই শুঁটকি মেলা।
স্থানীয়দের মতে, প্রায় দুইশ' বছরেরও অধিক সময় ধরে পহেলা বৈশাখে এখানে মেলা বসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ী ছাড়াও বাহারি শুঁটকির আকর্ষণে দূর-দূরান্ত থেকে ভোজন রসিকরা মেলায় আসেন। প্রায় দুই শতাধিক নানা জাতের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। এসব পসরায় ছিল বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুড়ি, লইট্টা, পুটি ও টেংরাসহ নানা জাতের দেশীয় মাছের শুঁটকি। দেশী মাছের শুঁটকির প্রাধান্যই বেশি। এ ছাড়া ভারত থেকেও আমদানি করা বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি ওঠে।
মেলায় নাসিরনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট এবং সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুঁটকি নিয়ে আসেন। সামুদ্রিক অনেক বিরল জাতের মাছের শুঁটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমের শুঁটকি উঠেছে এই মেলায়। শুঁটকি ছাড়াও মেলায় আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে 'বিনিময় প্রথা' অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। রোববার ভোরে এ মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রি চলে। আর এ কারণেই ধারণা করা হয় এই মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো।
কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা ও বর্তমান ইউপি সদস্য মুখলেছুর রহমান জানান, দুইশ' বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত এই মেলা বসছে। এই মেলা আমাদের কুলিকুন্ডা গ্রামের ঐতিহ্য বহন করে। মেলা আয়োজনের কোনো কমিটি নেই। তারপরও মেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে।
সরেজমিন জানা যায়, মেলায় দুইদিনে লাখ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া মেলায় গৃহস্থালি পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি হয়। তবে এবার শুঁটকির আমদানি বেশি হলেও দাম ছিল চড়া।
স্থানীয়দের মতে ব্যতিক্রমধর্মী শুঁটকি মেলার পাশাপাশি পণ্যের বিনিময়ে পণ্য যুগ যুগ ধরে চালু রয়েছে।
উপজেলা সদরের লঙ্গণ নদীর তীরেও একই দিনে বসে 'বিনিময় প্রথা' অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে এ মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রি চলে। আলু, ডাল, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কেনেন। তবে রীতি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এখানে বিক্রি হয় মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়ি ও তৈজসপত্র। স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলস, ঝাঁঝর, থালা, ঘটি, বদনা, বাটি, পুতুল ও প্রদীপ মেলায় মানুষের নজরকাড়ে। গ্রাম্য মানুষের সামান্য পয়সা সংগ্রহের জন্য নানা ডিজাইনের মাটির ব্যাংকও বিক্রি হয় এ মেলায়।