কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চাষ হচ্ছে পরিবেশ নষ্টকারী বিষবৃক্ষ তামাক। আবাসিক এলাকায় তামাক পোড়ানোর ঘরগুলো বিপজ্জনক। প্রতিনিয়ত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে এলাকায়। আবাসিক এলাকায় তামাক পোড়ানোর ঘর কতটা বিপজ্জনক তা ঘটে যাওয়া উপজেলার সাতবাড়ীয়ার দক্ষিণ ভবানীপুরের মালিথাপাড়ার অগ্নিকান্ড থেকেই অনুমান করা যায়। অগ্নিকান্ডের বর্ণনা দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভেড়ামারা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান শামীম।
অন্যদিকে ভেড়ামারায় তামাক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মারধর করায় থানায় অভিযোগ দেন বাবা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেকে পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষরা। গত ৩১ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে যুবকটি। নিহত তামিম হোসেন ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমিরদিয়াড় মুন্সিপাড়া গ্রামের শাহিন ইসলামের ছেলে।
ভেড়ামারা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সকালে বাইরের কিছু মানুষের চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙে। গেইট খুলে দেখেন বাড়ির একদম পাশে আগুন লেগেছে। আগুন লেগেছে কাঁচা সোনা পোড়ানোর কারখানায়। মানে তামাকের ভাটায়। দ্রম্নত ফায়ার সার্ভিসে কল দেন। মুহূর্তেই দাউ দাউ করে আগুনের লেলিহান শিখা আকাশের দিকে উঠছে। আর বাঁশের গিট ফেটে জ্বলন্ত ছাঁই তার বাড়িসহ আশপাশে পড়ছে। এমন ঘটনা রাতে ঘটলে সকালে এলাকাবাসীর শরীরের কয়লা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যেত না। তামাক চাষে বিভিন্ন কোম্পানি প্রণোদনা দেয়। তামাক চাষাবাদ অনেক লাভজনক। কিন্তু এই লাভের কারণে এলাকাবাসীর ক্ষতি হলে এর দায় কে নেবে?
এছাড়াও গত ২৩ মার্চ সকালে উপজেলার ক্ষেমিরদিয়ার মুন্সিপাড়া গ্রামের শাহিন ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী আমজাদ হোসেনের তামাকের স্টিক বাঁধার দরদাম নিয়ে বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে শাহিনকে মারধর করেন আমজাদ। এ ঘটনায় আমজাদের বিরুদ্ধে ভেড়ামারা থানায় অভিযোগ দেন শাহিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৬ মার্চ আমজাদ ও তার পরিবার শাহিন ও তার ছেলেকে মারধর করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ মার্চ তামিম হোসেন মারা যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এলাকার প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের বাড়িতে রয়েছে তামাক পোড়ানোর ঘর। সেই সমস্ত তামাক পোড়ানোর ঘর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চাষির বাড়ির বাইরে নির্মাণ করা হয়েছে। ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত। চাষিরা তামাকের চাষ করলেও সেই তামাক উৎপাদনের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তরা। তামাক চাষে শ্রমিক সংকট এবং সস্তা শ্রমের কারণে তামাক উৎপাদনে শিশু শ্রমের ব্যবহার করা হচ্ছে অবলীলায়। যদিও এ সব বিষয় তদারকি করার কথা জেলা এবং উপজেলায় অবস্থিত সমাজসেবা অধিদপ্তরের ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের। কিন্তু অদ্যাবধি জেলাব্যাপী প্রশাসনের সেই ধরনের পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
অন্যদিকে তামাক পোড়ানো কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ, পাটকাঠি এবং তামাকের শুকনো ডাটা। যার ফলে ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকার গাছ কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। তামাক পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট বিষাক্ত ধোয়ায় এলাকার মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ভেড়ামারা ইউএনও আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, ভেড়ামারা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমের লিখিত অভিযোগে পেয়েছি। শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভেড়ামারা থানার ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, সাতবাড়ীয়ার দক্ষিণ ভবানীপুরের মালিথাপাড়ার আবাসিক এলাকায় অগ্নিকান্ডের ব্যাপারে ইউএনওকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলা প্রতিদিন গড়ে ২-১ তামাক পোড়ানোর ঘর অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। দৌলতপুর উপজেলা অনেক বড়। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের কোনো স্টেশন নেই। ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলায় একমাত্র ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ভেড়ামারায়। আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।