বারুণী স্নানে পুণ্যার্থীদের ঢল
প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মধু কৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে গঙ্গা স্নান করলে অশেষ পুণ্য ও ইচ্ছা পূরণ হয়। তাই এই দিনে নিজের ভালোর জন্য ও প্রয়াত স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনায় নির্দিষ্ট করা স্থানে স্নান করেন তারা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই বারুণী স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পুণ্যের আশায় উপজেলার বহমান সুতাং নদীর বেলেশ্বরীতে ভোর থেকেই হাজারও ভক্ত-পুণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নেন। একই সঙ্গে নিজের, সন্তানের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য করা হয় মানত। স্নানকে কেন্দ্র করে সুতাং তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় বারুণীর। এলাকায় বিরাজ করে বয়ে যায় উৎসবের আমেজ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে সুতাংয়ের কানাই নদীর সঙ্গম স্থলের ত্রিমোহনায় মধুকৃঞ্চ ত্রিয়োদশী তিথিতে পবিত্র গঙ্গাজল প্রবাহিত হয়। ফলে ভারতের গঙ্গাস্নানে যে পুণ্য লাভ করা যায় তা সুতাংয়ের বেলেশ্বরী মোহনায় পাওয়া যায়।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আড়াই শত বছরের পুরনো বারুণীর স্নান যমুনা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থীরা বারুণীর স্নান করতে এসেছেন যমুনা নদীর তীরে।
শিবালয়ের যমুনা নদীর তীরে পুণ্যার্থীদের ভিড়ে কোথাও ঠাই ছিল না। এ স্নানকে কেন্দ্র করে যমুনা নদীর তীরে হাজার হাজার পুণ্যার্থীদের মিলন মেলা হয়।
স্নান উপলক্ষে মাসব্যাপী গ্রাম্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় খই, বিন্নি, কসমিটিক, নাগর দোলস্না, ফার্নিচার দোকানসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান বসেছে।
বারুনীর স্নান করতে আসা জেলার দৌলতপুর উপজেলার মানদারতা গ্রামের কনিকা রানী সরকার, দিপালী রানী সরকার, অর্পিতা সাহা, শেফালী সরকার জানান, তারা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ বছর ধরে শিবালয় যমুনা নদীর তীরে বারুনীর স্নান করে আসছেন। প্রতি বছর বারুনীর স্নান করে পুণ্য করছেন।
উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রথীন সাহা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বারুণীর স্নান উপলক্ষে পুণ্যার্থীদের মধ্যে গঙ্গা পুজার প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে।
ওসি আব্দুর রউফ সরকার জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্ববী পুণ্যার্থীদের নিরাপদে বারুণীর স্নান করার জন্য পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হিন্দু পুণ্যার্থীদের পুণ্যস্নানে সুনামগঞ্জের যাদুকাটায় লাখো মানুষ ভিড় জমায়। শুক্রবার বিকেল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী এসে শ্রী শ্রী অধৈত মহাপ্রভুর রাজারগাঁও লাউর নবগ্রাম আখরাবাড়ি এলাকা ও ইসকন মন্দিরের আশপাশে ভিড় জমান। শনিবার সকালে নিদৃষ্ট তিথিতে গঙ্গাস্নান করে যে যার মতো ফিরে যান। কেউ এসেছিলেন মা বাবার অস্থি বিসর্জন দিতে কেউ বা এসছেন মনোবাসনা পূর্ণ করতে।
মধ্য তাহিরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সমিরণ রায় বলেন, তিনি তার বাবাকে নিয়ে যাদুকাটা নদীতে গঙ্গা স্নানে গিয়েছেন তার মায়ের অস্তি বিসর্জন দিতে।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনি বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যাস্নানকে কেন্দ্র করে বহু লোকের সমাগম হয়েছে যাদুকাটায়। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে গঙ্গাস্নান বা পুণ্যস্নান শেষ হয়েছে।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধা শহরসংলগ্ন ঘাঘট নদীর পাড়ে ঐতিহ্যবাহী বারুনীর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে নদীর পাড়ে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাদেবীর পূজার আয়োজন করা হয়। হিন্দু পুণ্যার্থী নদীতে স্নান সেরে গঙ্গা দেবীর পূজা অর্চনা করে। চৈত্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথির দিনেই ঘাঘট নদীর পাড়ে এই বারুনীর মেলা ও গঙ্গা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলা উপলক্ষে নদীর পাড়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী চারুকারু পণ্য, মাটির খেলনা, পস্নাস্টিকের সামগ্রী, খাদ্য সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য দোকান বসে। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন খেলারও আয়োজন করা হয়।
কাপ্তাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, পাহাড় আর কর্ণফুলী নদীর অপরুপ কোল ঘেঁষা শ্রীশ্রী মাতা সীতাদেবীর মন্দিরের সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করেছে। 'মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী' তিথিতে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো কাপ্তাই উপজেলার শীলছড়ি শ্রীশ্রী মাতা সীতাদেবীর মন্দির পরিচালনা কমিটির আয়োজনে হানামযজ্ঞের মাধ্যমে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালা। এদিন মহাবারুণী স্নান ও সীতামেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মহাবারুণী স্নানে অংশ নিতে সকাল ৭টা হতে কাপ্তাই, রাঙামাটি, রাঙ্গুনীয়া, রাজস্থলী, রাউজান, হাটহাজারী, চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গা হতে হাজারোও পুণ্যার্থীদের আগমন ঘটে। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন এই মন্দিরে।
মন্দিরের পাশে অবস্থিত কর্ণফুলী নদীতে মহাবারুণী স্নানের মাধ্যমে ভক্তরা পরমেশ্বর ভগবানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন। একদিকে বারুণী স্নান, অন্য দিকে মন্দির প্রাঙ্গণে তারকব্রহ্ম মহানাম আস্বাদনে ভক্তরা মেতে উঠছেন।
সীতাদেবী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জ্যোতির্ময়ানন্দ ব্রক্ষচারী সবাইকে এই জাগ্রত মন্দিরকে একটি আন্তর্জাতিক মহাতীর্থ স্থানে পরিণত করার আহ্বান জানান।