জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার অর্ধেক বরাদ্দের কারণে দেশজুড়ে ঘন ঘন বিদু্যৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারগুলো বন্ধ রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদু্যৎ অফিস বলছে, জাতীয় বিদু্যৎ খাতে বিদু্যতের ঘাটতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে জানান তারা। এদিকে, লাগামহীন লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সব সেক্টর। ভোগান্তি বাড়ায় ক্ষোভ গ্রাহকদের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টাই বিদু্যৎ সাপস্নাই বন্ধ রাখছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, ডেইরি ও পোল্ট্রি খামার ক্ষতির মুখে পড়ছে। বিদু্যৎ অফিস বলছে, জাতীয় বিদু্যৎ খাতে বিদু্যতের ঘাটতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে জানান তারা।
নারায়ণগঞ্জ পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-২ এর আড়াইহাজার জোনাল অফিসের আওতায় শত শত শপিং সেন্টার, শিল্প কারখানা, ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্ম এবং সেচ প্রকল্প রয়েছে। গত প্রায় এক সপ্তাহের বিদু্যৎ বিভ্রাটের কারণে সব সেক্টরে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অফিস-আদালতে কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বোরো জমি সেচের অভাবে শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। এখন ঈদের সময়, ব্যাংকে রেমিট্যান্স ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলনের বিষয় রয়েছে। বিদু্যৎ বিপর্যয়ের কারণে এ খাতগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাজারে কম্পিউটার কম্পোজের দোকানগুলোতে ঘন ঘন বিদু্যৎ ট্রিপ করায় কম্পিউটারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার সাড়াদিন বিদু্যৎ ট্রিপ করেছে। ১০ মিনিট বিদু্যৎ আছে তো ৩০ মিনিট নেই। এমন অবস্থায় দিন চলার পর রাত ১১টায় বিদু্যৎ চলে গিয়ে সাড়া রাত আর আসেনি। এ অবস্থায় অফিসের ডিজিএম, এজিএম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের ইনচার্জ ও কর্মচারীদের বারবার পরিস্থিতি জানার জন্য ফোন করলে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। রোজাদাররা ইফতার ও সেহরি অন্ধকারে খেয়েছেন এবং তারাবির নামাজ গরমে ও অন্ধকারে কষ্ট করে পড়েছেন। এমন কি ফজরের আজান পর্যন্ত মাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বুধবার সকালে আড়াইহাজার জোনাল অফিসের এজিএম হাসান তারেককে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কিছুই করার নেই। সাওঘাট অফিস আমাদের যতটুকু বিদু্যৎ সাপস্নাই দেয় আমরা তাই দিতে পারব। এর বেশি দেওয়া সম্ভব না।'
নারায়ণগঞ্জ পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-২ এর সাওঘাট অফিসের জেনারেল ম্যানেজার নূর মোহাম্মদ জানান, বিদু্যৎ কম পাই, তাই কম সাপস্নাই দেই। এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়।
কাউখালী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, চৈত্র দাবদাহের সঙ্গে পালস্না দিয়ে রাঙামাটির কাউখালীতে দিন-রাতে চলছে বিদু্যতের ভয়াবহ লুকোচুরি খেলা। মাসজুড়ে বিদু্যতের এই ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। রমজান মাসের শুরু থেকেই ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। ইফতার, সেহ্?রি এমনকি নামাজের সময় অতিরিক্ত লোডশেডিং হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম চলছে বিদু্যতের আসা-যাওয়ার খেলা। প্রতি ১ ঘণ্টা পরপর চলে এই ভেল্কিবাজি। দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলছে লোডশেডিং। সন্ধ্যা নামলেই উপজেলা হয়ে উঠে ভূতুরে ঘর।
কাউখালী উপজেলায় সাড়ে চার মেগাওয়াট বিদু্যতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে এক মেগাওয়াট। অপ্রত্যাশিত বিদু্যৎ ভেল্কিবাজিতে গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে বেতবুনিয়া আবাসিক বিদু্যৎ সরবরাহ কেন্দ্র অফিস ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়ে পোস্টও করছেন। বৈশাখের শুরু থেকেই দুঃসহ গরমের সঙ্গে দিন-রাতে চলছে প্রচন্ড দাবদাহ। দিনে বিদু্যৎ থাকে না। সন্ধ্যায় বিদু্যৎ থাকে না। সব চেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে কোমলমতি শিশু ও বয়স্করা। এদিকে অতিরিক্ত গরমে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
রাঙামাটি বিদু্যৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জালাল উদ্দীন জানান, 'জেলার সব উপজেলায় একই অবস্থা। এই লোডশেটিং আমাদের হাতে নেই, এটি জাতীয় সমস্যা। বিভিন্ন-সংকটের কারণে বর্তমানে বিদু্যৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। আমরা তবুও চেষ্টা করছি গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করতে।'
উদ্যোক্তা মো. ইউসুফ বলেন, 'আমার একটি পোল্ট্রি হ্যাচারি আছে। বিদু্যতের লোডশেডিংয়ে দুটোতেই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মুরগির বাচ্চা মারা যাচ্ছে। বেশি গরম আর বিদু্যৎ-দুটির যে অবস্থা, এতে করে ব্যবসায় বড় লোকশনের আশঙ্কা রয়েছে।'
কাউখালী উপজেলার সদরের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম, জাকির হোসেন বলেন, 'বিদু্যৎ একবার চলে গেলে কখন আসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। আমরা কম্পিউটারে কম্পোজ, ফটোকপি করি। এগুলো বিদু্যৎ ছাড়া কাজ হয় না। অনেকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও করা যায় না।'
কলেজ শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'সারাদিন কখন বিদু্যৎ আসে আর কখন চলে যায়, কেউ টের পায় না। সারাদিন রোজা রেখে রাতে পড়াশোনা করা যায় না, বিদু্যৎ থাকে না। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।'
এ ব্যাপারে বেতবুনিয়া বিদু্যৎ সরবরাহ, বিউবো, উপ-সহকারী আবাসিক প্রকৌশলী লাহরী খাঁন জানান, এটি একটি জাতীয় সমস্যা। তবুও ইফতার, সেহ্?রি ও নামাজের সময় যেন বিদু্যৎ সরবরাহ করা যায়, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নবীগঞ্জ উপজেলায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বিদু্যৎয়ের লোডশেডিং। তীব্র গরমের মধ্যে ঝড়ের প্রভাব ও বিদু্যৎ বিভ্রাটের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। চারদিকে মানুষের মধ্যে হাঁসফাঁস দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী, বিদু্যৎ না পাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে বিদু্যৎ বিভ্রাটের ঘটনায় ভুক্তভোগী গ্রাহকরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার নবীগঞ্জ উপজেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকে সারাদিন বিদু্যৎ ছিল না উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামে। পলস্নীবিদু্যতের গ্রাহকদের অভিযোগ- গত ৩১ মার্চ মধ্যরাতে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। ওইদিন রাত ১১টার পর বিদু্যৎ চলে যায়। ১ এপ্রিল সারাদিন বিদু্যৎ বিভাগ সঞ্চালন লাইন মেরামত করলে রাত ৯টার দিকে বিদু্যৎ চালু হয়। তবে এরপর থেকে ১ ঘণ্টা বিদু্যৎ থাকলেও পরবর্তী ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং শুরু হয়। ২ এপ্রিল তীব্র গরমের মধ্যে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিদু্যৎ ছিল মাত্র ২-৩ ঘণ্টা। ৩ এপ্রিল ভোরে থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তীব্র গরমের মধ্যে একটানা বিদু্যতের দেখা মেলেনি। ৪ এপ্রিল ভোর রাত থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ব্যাপক লোডশেডিং হয়। শহর বা গ্রাম কোথায়ও নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহ ছিল না। এক দিকে তীব্র গরম অন্যদিকে লোডশেডিং দুই কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এই মৌসুমে ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করতে হয়। কিন্তু বিদু্যতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা মান্দাভাব দেখা দিয়েছে।
বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান খালেদ মোশারফ জানান- গত রোববার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বিদু্যৎ একটানা ছিল না বললেই হয়, বিগত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মনে হয় ৮-৯ ঘণ্টা বিদু্যৎ ছিল। কালিয়াভাঙ্গা ইউপির ইমামবাড়ী বাজারের ফার্মেসি ব্যবসায়ী লিটন মিয়া জানান, গত তিন দিনে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০-২১ ঘণ্টা আমরা বিদু্যৎ পাচ্ছি না, পবিত্র রমজান মাসে সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যায় ইফতারের সময়, তারাবিহ নামাজের সময় বিদু্যৎ থাকে না, ঠিক তেমনি সেহেরির সময়ও বিদু্যতের দেখা মিলে না, তাপদাহ গরমের মধ্যে পলস্নীবিদু্যতের এমন লোডশেডিং ও বেলকিবাজি দুঃখজনক।
উপজেলার বনগাঁও গ্রামের সৈয়দ মিছবাউজ্জামান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা মাত্র ২ ঘণ্টা বিদু্যৎ পেয়েছি, একটা অনুষ্ঠানের জন্য ২০ কেজি গরুর মাংস কিনেছিলাম, গত তিন দিনে ক্রমাগত লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্রিজে মাংস নষ্ট হয়ে গেছে। পৌর কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, তীব্র গরম ও পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে লেখাপড়ার মারাত্মক বিঘ্ন হচ্ছে। শহরের ওয়ার্কসপের মালিক পিন্টু দেব বলেন, প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না। শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।
নবীগঞ্জ পলস্নীবিদু্যৎ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়জুলস্নাহ বলেন, অতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে, তাই বিদু্যৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এমনিতে আমাদের বৈদু্যতিক লাইনে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। কি কারণে লোডশেডিং হচ্ছে, তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলাবাসীর ভোগান্তির আরেক নাম বিদু্যৎ। পবিত্র মাহে রমজান মাসেও চরম বিদু্যৎ সংকটে নাকাল রাজস্থলীবাসী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা একেবারে অসহনীয়। সার্বক্ষণিক বিদু্যৎ লোডশেডিং ও বিভ্রাটসহ নানা ত্রম্নটির কারণে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে রাজস্থলী উপজেলার স্বাভাবিক জনজীবন ও অফিসিয়াল কাজকর্ম।
গত কয়েকদিন ধরে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে সেহরি, ইফতার, তারাবিহ নামাজে তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এতে রোজাদাররা পড়েছেন বিপাকে। গত কয়েক মাস রাজস্থলীতে বিদু্যৎ বিভ্রাটের তেমন কোনো সমস্যা পোহাতে হয়নি। তবে গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং বেড়ে চলেছে। কয়েকদিন ধরে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি একটু বাতাস-বৃষ্টি হলেই বিদু্যৎ চলে যাচ্ছে। দীর্ঘসময় পর আসছে। অনেক সময় ঝড়বৃষ্টি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ থাকছে সরবরাহ। বাঙালহালিয়া বাজার ব্যাবসায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল আলম জানান, দিনরাত সর্বক্ষণ বিদু্যৎ যাওয়া আসার মধ্যে থাকে। কেবল দিনে ৭-৮ বার বিদু্যৎ চলে যায়, আসে দীর্ঘক্ষণ পরে। এভাবে দিনরাত টানা দীর্ঘ সময় বিদু্যৎহীন থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। রাজস্থলী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নুল তালুকদার মেম্বার জানান, কারণে অকারণে যখন তখন বিদু্যতের নাজুক অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে রাজস্থলীতে। প্রতিনিয়ত দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিং ও ঘন ঘন বিদু্যৎ বিভ্রাটের কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম।
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে পলস্নীবিদু্যতের ঘন ঘন লোডশেডিং করা হচ্ছে। এরকম ভেলকিবাজিতে অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। উপজেলা সদরে একটু কম লোডশেডিং করা হলেও গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন লোডশেডিং করছে সারিয়াকান্দি পলস্নীবিদু্যৎ অফিস। বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলা সদরে ৪-৫ বার লোডশেডিং করা হলেও গ্রামাঞ্চলে ৬-৭ বার লোডশেডিং করা হয়েছে। উপজেলা পলস্নীবিদু্যৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-২ সারিয়াকান্দি জোনাল অফিসের আওতায় উপজেলাজুড়ে পলস্নীবিদু্যতের প্রায় ৫৩ হাজার গ্রাহক রয়েছে। উপজেলা সদরে পলস্নীবিদু্যতের একটি সাব-স্টেশন। গ্রাহকদের মধ্যে বিদু্যৎ সরবরাহের জন্য একটি সাব-স্টেশনে ৬টি ফিডারে বিভক্ত করা হয়েছে। আর এসব ফিডারের মাধ্যমে বিদু্যৎ সরবরাহ করা হয়।
জানা যায়, প্রচন্ড দাবদাহ, ভেপসা গরম আর পলস্নীবিদু্যতের ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন উপজেলাবাসী। ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম, চালকলে চাল উৎপাদন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। লোডশেডিংয়ে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি এবং হাসপাতালে ভর্তিরত ব্যক্তিদের কষ্ট সবচেয়ে বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গভীর নলকূপের অপারেটর ও অগভীর নলকূপের মালিকরা জানান, বর্তমানে ইরি-বোরো মৌসুম চলছে। ধানের জমিতে পানি সেচ দিতে হচ্ছে। দিন-রাতে ঘন ঘন পলস্নীবিদু্যতের লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো বিদু্যৎ না পাওয়ায় সময়মতো জমিতে পানি সেচ দিতে পারছেন না। ফলে ফলন নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-২ সারিয়াকান্দি জোনাল অফিসের ডিজিএম শফিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদু্যৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, কুমিলস্নার তিতাসে বিদু্যতের চাহিদা জাতীয় গ্রেড থেকে বরাদ্দ নেমেছে অর্ধেকে। তাই লোডশেডিংয়ের মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রাহকরা বিদু্যৎ পাচ্ছেন মাত্র ৬-৭ ঘণ্টা। এ অবস্থায় ফেসবুকে বইছে সমালোচনার ঝড়। লোডশেডিং নিয়ে যে যার মতো আপলোড দিচ্ছেন। আর সেগুলোতে নেটিজেনরা শেয়ার ও কমেন্স করে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন।
ফেসবুক নেটিজেনদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন আপলোড দিয়েছেন 'তিতাসে অতিরিক্ত লোডশেডিং চলছে। সারাদিন বিদু্যৎ থাকে না, এর মধ্যে তারাবিহ, সেহরি, ইফতারের সময়ও বিদু্যৎ থাকে না। কিন্তু ২ হাজার টাকার বিদু্যৎ বিল ৪ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।' একই পোস্ট আপলোড করেছেন ইমন হোসাইন। মোস্তফা কামাল লিখেছেন, 'পলস্নীবিদু্যতের লোকজনের হঠাৎ বিসিএস প্রিপারেশনের কথা মনে হলো। তাই স্মরণ করিয়ে দিল যে, এপ্রিল বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস।' আরেক নেটিজেন মো. রণক লিখেছেন, তিতাসে বিদু্যতের লোডশেডিং চরম পর্যায়ের বিপর্যস্ত। তিনি স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বাবু জিমল হাসান বিদু্যৎ-সংক্রান্ত পোস্টে লিখেছেন, 'পবিত্র রমজান মাসে জনগণ এই দুর্ভোগ আশা করে না, এমপির দ্রম্নত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'
এ ব্যাপারে পলস্নীবিদু্যৎ তিতাস জোনাল অফিসের এজিএম ওসমান ফারুক জানান, তিতাসে মোট চাহিদা আছে ৭-৮ মেগাওয়াট বিদু্যৎ। এখন আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে দিনে সাড়ে তিন এবং রাতে সাড়ে চার মেগাওয়াট বিদু্যৎ পাচ্ছি। তাই এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ফেসবুকে তারাবিহ, সেহেরি ও ইফতারের সময় লোডশেডিং নিয়ে যে বির্তক উঠেছে, তা ঠিক না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, এই তিনটি সময় বিদু্যৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে।