মাত্র কয়েক দিন পর মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। প্রতি বছর পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ও আশপাশের শিল্পাঞ্চল থেকে গ্রামে যান অসংখ্য কর্মজীবী মানুষ। ফলে মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রী ও চালকদের। ভোগান্তি এড়াতে এবার একটু আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু সূত্রে জানা যায়, সোমবার ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৫৫৪টি যানবাহন সেতু পারাপারের বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০ টাকা। ৩১ মার্চ একই সময় ১৭ হাজার ৮৯৭টি যানবাহনের বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫০ টাকা। অনুরূপভাবে ৩০ মার্চ ২৪ ঘণ্টায় ১৭ হাজার ২১৫টি যানবাহন পারাপারের বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৬১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫০ টাকা।
সরেজমিন বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের ৬৫ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচটিসহ মোট ২৬ জেলার ১১৬টি রুটের যানবাহন চলাচল করে। অতিরিক্ত যাত্রীর আনাগোনায় পরিবহণের সংখ্যাও বেড়েছে। যানজট কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে সড়কের মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত ডিভাইডারও দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ স্বাভাবিক তৎপরতার সঙ্গে আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাধারণত ঈদের ৫-৬ দিন আগে ঘরে ফেরা মানুষ ছুটতে শুরু করে। এবার ৮-৯ দিন আগেই মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কে রংচং করা কিছু ফিটনেসবিহীন গাড়িও দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবহণ শ্রমিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত উত্তরবঙ্গের মানুষ ঈদে এ পথে বাড়ি ফেরেন। ফলে অতিরিক্ত মানুষের চাপে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।
এ মহাসড়কে যাতায়াতকারী উত্তরবঙ্গগামী কয়েকটি পরিবহণের চালকের সহকারী (হেলপার) জানায়, প্রতিবছর ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী থাকে। ফলে গাড়িও বেশি প্রয়োজন হয়। মহাসড়কে এখন বাহারি গাড়ির মহড়া দেখা যাবে। যেগুলো আঞ্চলিক সড়কে চলতে হিমশিম খায় সেগুলোও ঈদে দূরপালস্নার বাস হয়ে যায়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাজেদুল ইসলাম জানান, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনো তেমন কোনো চাপ নেই। স্বাভাবিক গতিতে মহাসড়কে যান চলাচল করছে। ঈদ উপলক্ষে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছু বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, টাঙ্গাইল সওজ'র নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান জানান, এ বছর টাঙ্গাইল অংশে ৬৫ কিলোমিটার মহাসড়কের ১৩ কিমিতে চার লেন প্রকল্পের কাজ চলছে। এরমধ্যে সেতু থেকে এলেঙ্গার দিকে তিন কিমি ও এলেঙ্গা থেকে সেতুর দিকে তিন কিমির কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় মাঝে প্রায় সাত কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক রয়ে গেছে। ওই অংশে যাতে জট না হয় সেজন্য প্রতি কিলোমিটারে ১০ জন করে দায়িত্বশীল ব্যক্তির নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই অংশে নছিমন, করিমন, সিএনজি, অটো কোনো প্রকার থ্রিহুইলার চলতে দেওয়া হবে না।
বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিন এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদের দিন পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
তিনি আরও জানান, ঈদকে সামনে রেখে টোলপস্নাজায় টোলবুথ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। মোটর সাইকেলের জন্যও আলাদা দুটি করে টোলবুথ বাড়ানো হবে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।