'আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতা স্কুলজীবনে পা দিয়েই পড়েননি এমন মানুষ খুবই কম আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈশাখ মাসে নাগর নদী দেখে কবিতাটি লিখেছিলেন। এখন আর ছোট নদী নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাত হ্রাস ও দখলের কারণে চৈত্র মাসেও নদীর পানি থাকে না। আজ নদীর কূল আছে, কিনারা আছে, কিন্তু ঢেউ নেই। বহুদিন ধরে নদীর বুকে পাল তুলে নৌকা আসা-যাওয়া করে না। দিন দিন ছোট হয়ে আসছে নদীর আকার। নদীর বুক থেকে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন করায় নদীর রূপ আজ বিলীন হওয়ার পথে।
জানা গেছে, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের নাগর নদী পানি না থাকায় নাব্য হারাচ্ছে। একদিকে নাগর নদী গভীর করে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন এবং আবার নদীর দুই ধার দিয়ে অনেকেই কৃষি আবাদ করেছে। যার ফলে নদী হারাতে বসেছে তার রূপ। একসময় পানিতে থইথই করত নাগর নদী। পানি না থাকায় শুকিয়ে মরছে এটি, যৌবন হারিয়ে এখন অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম প্রান্তে ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকান্দি গ্রামের বুকচিরে অবস্থিত নাগর নদী।
এই নদী বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রবহমান করতোয়া (নীলফামারী) নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে নাটোরের সিংড়া নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নওগাঁর আত্রাই নদীর জলধারায় সম্পৃক্ত। আজাদ, আকবর আলী, মিন্টুসহ কয়েকজন জেলে ও নাগরকান্দি গ্রামের সাধন জেলে বলেন, একসময় এই নদ-নদী-নালা, খাল-বিল, শাখা-প্রশাখাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে বোয়াল, গজার, মাগুর, কৈসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। সেই মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদীতে পানির অভাবে মাছও পাওয়া যায় না। পানি তো দূরের কথা নদীই মরা গাঙে পরিণত হওয়ার পথে। তাই নাগর নদী খনন করে নাব্য ফিরে আনার দাবি জানান তারা।
বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ সরকার জানান, নাগর নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রজেক্ট সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদী তার পূর্বের অবস্থা ফিরে পাবে। সেই সঙ্গে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।