ঈদ ও বৈশাখী মেলা এবং নানা উৎসবে সোনারগাঁওয়ের জামদানি শাড়ির চাহিদা ব্যাপক। ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এখনো আশানুরূপ বিক্রি না হলেও ঈদের আগে সোনারগাঁওয়ের জামদানি শাড়ি বিক্রি বাণিজ্য ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে মনে করছেন তাঁতিরা।
প্রতিবছর এই উপজেলার চৌরাপাড়া, মুছারচর, আলমদীচরভুলা, মালিপাড়া, সাদিপুর, ব্রাহ্মণবাওগাঁ, খেজুরতলা, কাজিপাড়া, শেকেরহাট, বাসাবো, তিলাব, বস্তল, কলতাপাড়া, কাহেনা, গণকবাড়ি, ওটমা, রাউৎগাঁও, নয়াপুর, উত্তর কাজিপাড়া, চেঙ্গাইন, খালপাড় চেঙ্গাইন, ভারগাঁও, কান্দাপাড়া, ফিরিপাড়া, বাইশটেকি, আদমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রমজানের প্রথমেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এসে অগ্রিম মূল্য দিয়ে নিজেদের পছন্দের শাড়ির কথা জানিয়ে যান। এরপর তাদের চাহিদা অনুযায়ী জামদানি শাড়ি তৈরি করেন। এসব শাড়ির দাম তিন হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা। এ ছাড়া থ্রি-পিস এক হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা এবং পাঞ্জাবি এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
সোনারগাঁয়ের মালিপাড়া এলাকার তাঁতি ও তাঁত খানার মালিক স্বপন মিয়া বলেন, 'আগে অনেক জামদানি বিক্রি হতো, গত দুই বছরে তেমন একটা বিক্রি হয়নি। ওই বছরগুলোতে অনেক জামদানি বানিয়েছিলাম। ঈদের পর সেগুলো বিক্রি করতে হয়েছে। এবার আশা করছি ভালোই শাড়ি বিক্রি হবে। মানুষ জামদানির কদর বুঝতে পারছে। মোবাইল ফোনেও জামদানির অর্ডার পেয়েছি। তাই আর কথা বলার সময় নেই, শুধু কাজ আর কাজ। কারণ ঈদের আগে ১০ লাখ টাকার জামদানি বিক্রি করতে চাই।'
এদিকে ঢাকা থেকে সোনারগাঁয়ের সাদিপুর গ্রামের জামদানি পলস্নীতে আসা আসমা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি প্রায়ই সোনারগাঁয়ের জামদানি পলস্নীগুলোতে আসেন। ঢাকাতে তার একটি দোকান আছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিবছরের মতো এবারও তিনি পাইকারি দরে জামদানি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন। তিনি জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত তিন-চার বছর ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এবার তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন। এবার জামদানির প্রতি ক্রেতাদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই টাকা জোগাড় করে শাড়ি কিনতে এসেছেন।
সোনারগাঁ জামদানি তাঁতি সমিতির সভাপতি মো. সালাউদ্দিন বলেন, এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। তবে ভালোই অর্ডার আসছে। আশা করছেন এ বছর তাদের ব্যবসা কয়েকগুণ বাড়বে।
ব্যবসায়ীরা মুনাফার আশায়, নানা রঙবেরঙের শাড়ি দোকানে তুলেছেন। এই ঈদে আশা করছেন প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে সোনারগাঁ জামদানিপলস্নীতে।
সোনারগাঁয়ের জামদানিপলস্নীগুলো দেখভাল করে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর। এ প্রতিষ্ঠানের উপপরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার জানান, প্রতিবছরই ফাউন্ডেশনের ভেতরে মাসব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলায় জামদানি শাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বিশেষভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘরের ভেতরে জামদানিপলস্নী রয়েছে যেখানে সারা বছরই জামদানি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া ও পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য ও গৌরব ধরে রেখেছেন জামদানি শিল্পীরা।