প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন
ফসলি জমি ও নদীর পাড়ের মাটি বিক্রি হচ্ছে ভাটায়
প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
বিভিন্ন এলাকার মতো কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও রাজবাড়ীর পাংশায় জমি ও নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। ফলে মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছেন মানুষ। এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ইটভাটাগুলো সরকারি নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে মাটি কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। ইটভাটার মৌসুম শুরুর মাসখানেক মাটি কাটা ও বহন বন্ধ থাকলেও হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে যেন মাটি কাটা ও বহন করার ধুম পড়ে গেছে। প্রতিদিন রাতে সমানতালে মাটি কেটে শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধ যান এবং ড্রাম ট্রাকে করে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মাটিবাহী এসব শ্যালো ইঞ্জিনচালিত অবৈধ যান এবং ড্রাম ট্রাক বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা এবং অতিরিক্ত ওজন বহন করায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল এবং গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
জানা যায়, উপজেলার আড়িয়া ইউনয়নের ঘোড়ামারা গ্রামে, বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কিশোরী নগর, দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতখালী, রিফাইতপুর ইউনিয়নের দিঘলকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিতে পুকুর কেটে এবং জমির টপসয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
আড়িয়া কামারপাড়া এলাকার কৃষক তোফাজ্জেল বিশ্বাস জানান, আড়িয়া এলাকায় ভেকু মেশিন দিয়ে বিকাল থেকে শুরু করে সারারাত ধরে ৩ ফসলি জমির টপসয়েল কেটে ইটভাটাতে বিক্রি করা হচ্ছে।
মাসুদ (ছদ্মনাম) নামে একট ট্রলি চালক জানান, প্রতি ট্রলি মাটি ইটভাটা মালিকরা কিনছেন ১২শ' টাকায়। এর মধ্যে থানার লোক ৬০০ টাকা জমির মালিক ৩০০ টাকা ও ট্রলি ভাড়া ৩০০ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা রাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত শত শত ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকে করে থানার সামনে দিয়ে মাটি বহন করা হলেও থানা পুলিশ বা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
এসব মাটি বহনকারী ট্রলি বা ট্রাক থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেওয়া হয় না বলে দাবি করেছেন দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।
এদিকে এসব ভাটায় জ্বালানি হিসেবে প্রতিদিন কয়েকশ' টন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যে কারণে, গাছপালা উজাড় হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।
ইটভাটায় মাটি বহন ও কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুলস্নাহ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে অভিযান চলমান রয়েছে।
পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, সরকারি আদেশ অমান্য করে রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভার সত্যজিৎপুর গ্রামে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে ফসলি জমি থেকে ও চন্দনা নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে।
সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তার ওপর ভেকু মেশিন দাঁড় করানো রয়েছে। পাশেই ফসলি জমি কেটে যেন পুকুর বানানো হচ্ছে। যেখান থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে তার ৩ পাশেই ফসল বিদ্যমান। অপর পাশে চন্দনা নদী। সেখানের পাড় ঘেষেই কাটা হচ্ছে মাটি।
স্থানীয়রা বলেন, কয়েকদিন ধরেই ফসলি জমির মাটি অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী। এতে করে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে কৃষি জমি। অন্যদিকে ভাটার ধোঁয়ায় ও মাটি বহনকৃত ট্রাকের কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে জনজীবন ও ফসল। গ্রামীণ সড়কগুলো পড়ছে ধ্বংসের মুখে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন কৃষক বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা অন্যায়। ওরা যেভাবে মাটি কেটে অন্যর ফসল নষ্ট করে রাস্তা বানিয়ে সে পথ দিয়ে তারা মাটির গাড়ি নিয়ে যায়। তাতে ওই জমির মাটি নষ্ট হয়ে যায়। আমরা বাধা দিলে গালাগালি করে এবং মারধরের হুমকি দেয়।
এদিকে ৩০ মার্চ মৌরাটে মাটি কাটার অভিযোগে এক ইউপি সদস্যসহ ২ জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।