সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পণ্যের চড়া দামেও জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা

স্বদেশ ডেস্ক
  ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
মাদারীপুরের শিবচরে বিপণিবিতানে ক্রেতাদের ভিড় -যাযাদি

পণ্যের চড়া দামেও জমে উঠেছে ঈদের বাজার। বিপণিবিতানগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। মার্কেটগুলোতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে ভিড়। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের শিবচরে প্রতিটি মার্কেটেই ক্রেতার উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। পণ্যের চড়া দামেও জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ক্রেতাদের পদচারণায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মুখর থাকছে বিপণিবিতানগুলো। ক্রেতাদের এমন ভিড়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। তবে অতিরিক্ত দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

ঈদের মার্কেটগুলোতে দখল করে আছে দেশি-বিদেশি বাহারি রঙের পোশাক। সাদ আর সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি-পাজামা, শার্ট-প্যান্ট, মেয়েদের জন্য থ্রি-পিস, ফ্রক, স্কার্ট ও শিশুদের শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি-পাজামাসহ নানা নজরকাড়া পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।

সোমবার উপজেলার ৭১ সড়ক রোড, ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী সুপার মার্কেট, খলিফাপট্টি, মোলস্না মার্কেট ও পাঁচ্চর বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে ভিড় রয়েছে। মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেলো জমজমাট ঈদের বাজার।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিপণিবিতানগুলোতে ঈদ উপলক্ষে এসেছে নতুন নতুন কালেকশন। গরমকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইনে আনা হয়েছে নতুনত্ব। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাবেচা চলছে। কাপড়ের মধ্যে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে শাড়ি, থ্রিপিস ও পাঞ্জাবি। এর পরেই রয়েছে গহনা ও প্রসাধনীর স্থান। পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী দেশি-বিদেশি পোশাক, জুতা ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন ক্রেতারা। তবে সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। খলিফাপট্টি ঈদবাজার করতে আসেন নজরুল ইসলাম ও আঁখি আক্তার দম্পতি। তারা জানান, 'শেষ মুহূর্তে ভিড়ের কারণে এ বছর ঈদের কেনাকাটা একটু আগেই সেরে ফেলার ইচ্ছা ছিল। সে উদ্দেশে বাজারে এসে দেখি উপচেপড়া ভিড়। দাম চাইছে গলাকাটা। এর মধ্যেই মেয়ের জন্য পোশাক কিনলাম। এখনো আমার কেনাকাটা বাকি।'

আরিফ নামে আরেক ক্রেতা জানান, তার পরিবারের সব নারী সদস্যের জন্যই তিনি থ্রিপিস কিনেছেন। এবার ঈদবাজারে আগের বছরের তুলনায় দাম বেশি।

পোশাক কেনাকাটা শেষে সবাই ছুটছেন জুতা ও কসমেটিকসের দোকানে। ৭১ সড়কের আশপাশে বিভিন্ন জুতার দোকানে জুতা কিনতে আসা ক্রেতা জুয়েল মিয়া বলেন, ঈদের জন্য নতুন শার্ট ও প্যান্ট কিনেছেন। নতুন জুতা কিনতে এসেছেন। তবে জুতার দামও চড়া।

৭১ চত্বরসংলগ্ন সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানে কসমেটিকস হাউজে আসা নুসাইবা আক্তার, রেহানা আক্তার, সুমাইয়া আক্তারসহ কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী জানান, তাদের কেনাকাটা শেষ। শুধুমাত্র গলার নেকলেস, চুড়ি ও বিভিন্ন কসমেটিকস কিনতে কসমেটিকস দোকানে এসেছেন। সবকিছুর দাম চড়া হলেও ঈদ উদযাপন করতে সবকিছুই কিনতে হয়েছে।

খলিফাপট্টির কয়েকজন দোকানদার বলেন, ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। ক্রেতাদের রোজার শেষের দিকে সবসময় মার্কেট করতে দেখা যায়। কিন্তু এবার ভিন্ন। মাসের শুরুতেই কেনাকাটায় মনোযোগ দিয়েছে।

কাঁঠালবাড়ি ফ্যাশনের মালিক রানা আহম্মেদ বলেন, ছুটির দিন বিক্রি বেশি হয়। ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন, ঘুরছেন, পছন্দমতো কাপড় কিনছেন। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের যেন পছন্দ হয় এমন সব কাপড় দোকানে তুলেছি।

তবে যাদের টাকা আছে তাদের ঈদের কেনাকাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের কেনাকাটা এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। বাজার ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ১৫ রোজার পর থেকেই পৌর সদরের বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি বেড়েছে। ক্রেতাদের উপস্থিতিও উলেস্নখযোগ্য। বোয়ালমারী পৌরসভার রাজপস্নাজা মার্কেট, সোবহান শপিং কমপেস্নক্স, বিলাসী শপিং কমপেস্নক্স ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন জামা-কাপড় ও জুতা-স্যান্ডেলের দোকানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়। তবে নারী ও শিশুদের সংখ্যাধিক্য ছিল উলেস্নখ করার মতো।

ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ীরাও নানা ধরনের বাহারি রকমের কাপড় দোকানে এনেছেন। কোন কোন ব্যবসায়ী ধারদেনা করে দোকানে পণ্যসামগ্রী উঠিয়েছেন। বিক্রি শেষে দেনা পরিশোধ করবেন।

বাহারি ধরনের পোশাকের মধ্যে মেয়েদের আইটেমই বেশি। মেয়েদের থ্রি-পিসের মধ্যে নায়েরা, আলিয়াকাট, জর্জেট, চিনন, বারিশা, শারারা, গারারা উলেস্নখযোগ্য। এগুলো দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রিপিস মানভেদে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমদামী থ্রিপিসগুলো ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুরুষদের পাঞ্জাবির মধ্যে রয়েছে- সিকুয়েন্স, খান্দানি, লোবান, কাবলি পাঞ্জাবি। এর বাজার মূল্য এক থেকে দুই হাজার টাকা। এছাড়া জিন্সের প্যান্ট, টি শার্ট, ফুল শার্ট, ট্রাউজার, গ্যাবার্ডিন এগুলো প্রকার ভেদে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ইউসুফ গার্মেন্টসের মালিক দাউদুর রহমান শামীম বলেন, 'এবার রোজায় আমাদের বেচাকেনা মোটামুটি ভালো। গত বছর ভালো বেচাকেনা হয়েছিল। তবে আশা করি, অফিস-আদালত বন্ধ হলে বিক্রি আগের তুলনায় বাড়বে।'

মুসলিম গার্মেন্টসের সেলসম্যান তাকওয়া শেখ বলেন, 'রোজার কারণে সকালে ও রাতে মোটামুটি বিক্রি হয়। তবে এবার সাধারণ ক্রেতারাও দামি পোশাক ক্রয় করছেন। কিশোর-কিশোরীদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। ২৫ রোজার পর থেকে বিক্রি বাড়তে পারে।'

হাই কালেকশনের মালিক মো. জাহাঙ্গীর শেখ বলেন, আমাদের দোকানে নারী, পুরুষ, কিশোর, কিশোরী, বাচ্চাদের পোশাক রয়েছে। এ কারণে সব মিলে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তবে মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের পোশাক বিক্রি কম।'

রঙ্গীন সুতা দোকানের মালিক হেলাল মিয়া বলোন, 'দোকানে নারীদের পোশাকসহ বাচ্চাদের ভালো মানের দামি পোশাকও এনেছি। প্রতি পিস বাচ্চাদের পোশাক মানভেদে দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে। বেচাকেনা ভালো।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে