চট্টগ্রামে অবস্থান কর্মসূচিতে পরিবেশকর্মীরা

'গাছ কাটার আগে আমাদের কাটো'

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেক্স
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েরর্ যাম্প নির্মাণের জন্য শতবর্ষীসহ ৪৬টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরই মধ্যে নগরীর টাইগারপাস ও সিআরবি এলাকার এসব গাছ কাটার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। তবে কোনোভাবেই গাছগুলো কাটতে দিতে রাজি নন পরিবেশকর্মীরা। সোমবার দুপুরে গাছ রক্ষায় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পরিবেশকর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত 'উন্নয়নের করাত থেকে গাছেদের মুক্তি দাও', 'বেঁচে থাকা গাছ আপনার কী ক্ষতি করে', 'গাছ কাটার আগে আমাদের কাটো'- এমন নানা স্স্নোগান লিখে গাছ রক্ষার দাবি সংবলিত পস্ন্যাকার্ড হাতে তারা শতবর্ষী একটি গাছের চারপাশে অবস্থান নেন। বিশাল শিরীষগাছটিতে ইতিমধ্যে নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েরর্ যাম্পের প্রয়োজনে গাছটি যে কাটা হবে, তারই চিহ্ন বহন করছে এটি। ওই মহীরূহ এই সড়কের ৪৬টি গাছ কাটার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আর এমন পরিকল্পনার কথা জানাজানি হওয়ার পর গত রোববার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাগরিকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। তার জের ধরেই সোমবার দুপুরে এই বিক্ষোভ করেন তারা। 'সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের' ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। বেলা দেড়টা পর্যন্ত শতবর্ষী শিরীষগাছের চারপাশে অবস্থান নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন তারা। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান গাছ কাটার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'যারা এসব সিদ্ধান্ত নেন, তারা বিভিন্ন স্বার্থে কাজ করেন। এই গাছগুলো থেকে নানা রকম সুবিধা পেয়ে থাকি এটা নিয়ে তারা অবহিত নন। প্রকৃতি থেকে যে আমরা নানা সুবিধা পাই, এসব নিয়ে তাদের জানাশোনা, জ্ঞান নেই। এসব জায়গায় যারা বসেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।' জানা যায়, সিডিএ চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ফেরুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৪ নভেম্বর ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। মূল অংশের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। মূল এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৫টির্ যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আছে নগরের টাইগারপাসে। দুটির্ যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে গাড়ি ওঠারর্ যাম্প নির্মাণ করা হবে। সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড় ঘেঁষে। আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েরর্ যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ) নির্মাণ করতে গাছগুলো কাটতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ইতিমধ্যে গাছগুলোতে লাল ও সাদা কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকের্ যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটার উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন নগর-পরিকল্পনাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, যেসব গাছ কাটা যাবে, তার মধ্যে শতবর্ষী গাছ আছে। গাছগুলো রক্ষায় এই অংশের্ যাম্প নির্মাণের দরকার নেই। গাছ কেটের্ যাম্প নির্মাণ করা হলে সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা পরিবেশের গুরুত্ব বিবেচনা করে অন্য কোথাওর্ যাম্প নির্মাণের অনুরোধ জানালে তা রাখেনি সিডিএ। অবশ্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ বলছে, এইর্ যাম্প নির্মাণ করতে হলে গাছ কাটতে হবে। এর আগে নগরের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে সড়কদ্বীপে থাকা অনেক গাছ কেটেছিল সিডিএ।