ঈদযাত্রায় ঢাকা-বরিশাল রুটে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি প্রায় শেষে দিকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কপথে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।
তবে এক সময়ের ভরসাস্থল নদীপথের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে ঢিমেতালে।
যাত্রীরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চের টিকিটের তেমন চাহিদা নেই। তবে রোটেশনের কারণে ট্রিপে লঞ্চ কম থাকায় ছুটির দিনগুলোর আগে যাত্রীর চাপ থাকে ঢাকা-বরিশাল রুটে।
ঈদ সামনে রেখে ১৫ রোজা থেকে আগাম টিকিট বিক্রির ঘোষণা দেয় লঞ্চগুলো। টিকিট বিক্রির এক সপ্তাহ পার হতে চললেও কাঙ্ক্ষিত যাত্রীদের দেখা নেই টিকিট কাউন্টারে। অথচ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পাওয়া যেত না টিকিট।
লঞ্চের স্টাফরা জানান, ৬ এপ্রিল থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে ৩৮টি নিয়মিতসহ ঈদের বিশেষ লঞ্চ চলাচল করবে। তবে এখনো আশানুরূপ টিকিট বিক্রি হচ্ছে না, ভবিষ্যতে হবে কিনা, তাও জানা নেই।
সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টার স্টাফ শাকিল সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত বছর যে রকম চাপ ছিল, এবার তেমনটা নেই। টিকিট বিক্রি অনেকটাই কম হচ্ছে এবার।
বরিশাল নগরীর কাউনিয়ার বাসিন্দা চাকরিজীবী মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার আগ পর্যন্ত একচেটিয়া ব্যবসা করেছে একাধিক লঞ্চ কোম্পানিগুলো। ওই সময় বিশেষ করে দুই ঈদে ঢাকা এবং বরিশাল থেকে যাত্রার প্রধান বাহন ছিল লঞ্চ। আর লঞ্চের কেবিন ছিল সোনার হরিণ। এ জন্য চার-পাঁচ রোজার পর থেকেই শুরু হতো কেবিন বুকিংয়ের প্রতিযোগিতা। এতে করে সাধারণ যাত্রীদের মারাত্মক দুর্ভোগে পড়তে হতো। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর সেই অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
'যেখানে বরিশাল নৌবন্দর পন্টুনে সাতটি লঞ্চ একসঙ্গে ভিড়তে পারত না, আরও পন্টুনের প্রয়োজন ছিল। সেখানে বর্তমানে মাত্র দুই থেকে তিনটি লঞ্চ থাকছে। সেখান থেকে প্রতিদিন দুটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। একইভাবে ঢাকার সদর ঘাট থেকেও প্রতিদিন দুটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ওই দুটি লঞ্চের কমপক্ষে ৫ শতাধিক কেবিনের অর্ধেক বুকিং হয়, বাকি কেবিন খালি থাকে। যেখানে সাধারণ দিনগুলোতে কেবিন খালি থাকার কোনো কারণই ছিল না, এখন সেখানে কেবিন খালি নিয়ে লঞ্চগুলো চলাচল করছে। প্রথম তলা থেকে শুরু করে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ডেকও থাকছে খালি।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কোস্টগার্ড, থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশ, জেলা প্রশাসন ও বিআইডবিস্নউটিএর সদস্যরা একসঙ্গে কাজ করবেন। বন্দরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'এখন লঞ্চের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। লঞ্চের স্টাফ এবং যারা লঞ্চে চলাচলে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, তাদের দিকে খেয়াল রেখেই এই ব্যবসা চালিয়ে রাখা হয়েছে। এরপরও সড়কপথের চেয়ে লঞ্চে চলাচল আরামদায়ক, ভাড়া কম এবং তেমন দুর্ঘটনাকবলিত হয় না। প্রতিবছর ঢাকা থেকে বরিশালগামী বাস দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে যাত্রীরা নিহত-আহত হচ্ছেন। কিন্তু লঞ্চ দুর্ঘটনায় পড়েছে সে হিসাব তেমন একটা দিতে পারবে না কেউ।'
এদিকে ঈদ সামনে রেখে ঢাকা থেকে বরিশাল আসার অগ্রিম টিকিট বিক্রি এরই মধ্যে শেষ করেছে পরিবহণগুলো। এমনকি বাসের ফিরতি টিকিটও প্রায় শেষের পথে। যাত্রীর চাপ সামলাতে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কম সময় আসা-যাওয়ার সুবিধায় সড়কে যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।
দূরপালস্নার পরিবহণের ম্যানেজার বাদশা সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঈদের লম্বা ছুটির কারণে এবার যাত্রীর চাপ বেশি। এ অবস্থায় নিজ নিজ উদ্যোগে কোম্পানিগুলো চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবে।
নৌপথের পাশাপাশি সড়কেও কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জিহাদুল কবির জানান, নগরের নথুলস্নাবাদ ও রূপাতলী বাসটার্মিনাল এবং নদীবন্দরে তিনটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এ ছাড়া নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করি, মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ করে আবার কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবে।