নার্সের সিজারে প্রসূতির মৃতু্য পলাতক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষোভে ভাঙচুর
প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি ক্লিনিকে নার্স দিয়ে সিজারিয়ান অপারেশনের পর ইয়াসমিন আক্তার নামে এক প্রসূতির মৃতু্যর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরপরই হাসপাতালের মালিকপক্ষ, চিকিৎসক ও নার্স পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে উত্তেজিত জনতা ও নিহতের স্বজনেরা এসে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। গভীর রাতে হাসপাতালে এসে তদন্ত কমিটি ঘোষণা ও দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গত রোববার রাতে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকার লাইফ কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া নারী ইয়াসমিন আক্তার (৩০) উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ইন্দ্রপুর গ্রামের আসাদুলস্নাহর স্ত্রী।
নিহত প্রসূতির মা রাজিয়া খাতুন বলেন, 'রোববার দুপুর ১২টার দিকে ইয়াসমিনকে ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে ভর্তি করার পরামর্শ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়, ইফতারের পর সিজার করা হবে। এসময় স্বজনদের হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে। হাসপাতাল থেকে বিকাল সাড়ে ৫টায় জানানো হয় ইয়াসমিনের ছেলে সন্তান হয়েছে। পরে মেয়ের কাছে গিয়ে দেখি প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।'
নিহতের চাচা কামাল হোসেন বলেন, 'ইয়াসমিনের মায়ের ফোন পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলেও কোনো গুরুত্ব দেয়নি। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইয়াসমিনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে অন্যত্র পাঠানোর নির্দেশ দেয় তারা। এ সময় নিজেরাই অ্যাম্বুলেন্সে এনে মরদেহ তুলে দিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, 'ইয়াসমিনের সিজারিয়ান অপারেশনের সময় হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন না। ডাক্তার ছাড়া নার্স দিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করার কারণে আমার ভাতিজি মারা গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।'
এদিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃতু্যর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা হাসপাতালে জড়ো হয়। একপর্যায়ে নিহতের ১০ বছের শিশুর কান্না দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় তারা। শৃঙ্খলা ফেরাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক এনায়েত কবির। তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি স্বাভাবিক আনা হয়েছে। আলোচনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। নিহতের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ দেওয়া হবে।' এ ঘটনায় লাইফ কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
খবর পেয়ে গভীর রাতে হাসপাতাল পরিদর্শনের সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আনেন শ্রীপুরের ইউএনও শোভন রাংসা। তিনি বলেন, 'এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি হাসপাতালের বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসক ও প্রশাসনের কর্মকর্তার সমন্বয়ে ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।'