ফের চোখ রাঙাচ্ছে ডায়রিয়া!
প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আব্দুস সালাম আরিফ, পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত এক সপ্তাহে প্রায় তিনশ' রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তবে দিন যত যাচ্ছে গরমের সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও তেমনি বাড়ছে।
প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসেই পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চলের ডায়রিয়া প্রকোপ দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত এক সপ্তাহে ২৬৪ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি হয়েছেন। আর বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যাও এর থেকে কোনো অংশে কম নয়।
এদিকে ডায়রিয়া রোগীর চাপে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হাসপাতালের মেঝে থেকে শুরু করে হাঁটার পথ বারান্দা সবখানেই অস্থায়ী বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর মশা-মাছি এবং নোংড়া পরিবেশের কারণে ভোগান্তিতে আছেন আগত রোগী ও স্বজনরা।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আশা মির্জাগঞ্জ উপজেলা সুবিদখালী এলাকার রোগী আশয়া বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাতলা পায়খানা এবং বমি শুরু হয়। রাতে পাঁচ থেকে ছয়বার টয়লেটে যাওয়ার পর সকালে আর দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না। এরপর সরাসরি পটুয়াখালী হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। সেই থেকে স্যালাইন চলছে। এখন শরীর কিছুটা ভালো। তবে হাসপাতালে কোনো বেড পাননি, তাই বারান্দায় ফোম বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একই কথা জানান কলাপাড়া থেকে আশা রোহী ইসমাইল ফরাজী। তিনি বলেন, 'হাসপাতালে ভর্তি হইছি কিন্তু কোনো সিট খালি নাই। রাস্তার পাশে ছিট লাইচ্চা স্যালাইন ফুরতেছি। তয় মশা-মাছির কারণে টিকতে পারছি না। চারদিকে গন্ধ আর প্রচন্ড গরম, ভোগান্তির যেন কোনো শেষ নাই।'
পটুয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত সাত দিনে জেলায় ২৬৪ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বাউফল উপজেলায় ২৯, দশমিনা উপজেলায় ২৬, দুমকি উপজেলায় ১৮, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ১২, কলাপাড়া উপজেলায় ৩২ গলাচিপা উপজেলায় ৩৪ এবং পটুয়াখালী সদরে ১১৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ২১০৩ জন রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিলেও কোনো রোগীর মৃতু্য হয়নি।
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন এসএম কবির হাসান বলেন, 'গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিগত বছরগুলোতেও এমন ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। এসব বিষয় মাথায় রেখে ডায়রিয়ার চিকিৎসার বিষয় আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবার খাবার গ্রহণ এবং পানি পানের ক্ষেত্রে এ সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বল করতে হবে। খাবার স্যালাইনসহ অন্য ওষুধের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।'
এদিকে ডায়রিয়ার পাশাপাশি জেলায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ১৬২ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। তবে ডায়রিয়া কিংবা নিউমোনিয়ায় এ বছর জেলায় কোনো রোগী এ পর্যন্ত মারা যায়নি।