সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দুর্গাপুরে আবেদন করেও মিলছে না পুকুরপাড় সংস্কারের অনুমতি

দুশ্চিন্তায় মাছ চাষিরা!
দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
দুর্গাপুরে আবেদন করেও মিলছে না পুকুরপাড় সংস্কারের অনুমতি

দেশে আমিষের চাহিদা পূরণে দেশীয় প্রযুক্তিতে যে পরিমাণ মাছ চাষ হয়ে থাকে তার অর্ধেকেরও বেশি হয় রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায়। সমন্বিত মাছ চাষে গত ১৫ বছরে এ উপজেলায় মাছ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন থেকে চার গুণ। ফলে এলাকার মৎস্য চাষিরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, তেমনি মৎস্য চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষের। এছাড়া পুকুরপাড়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছেন মৎস্য চাষিরা।

গত বছর ভারি বর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু পুকুর ডুবে যায়। ফলে মাছ চাষিদের মাথায় হাত ও দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে। ওই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাছ চাষিদের বেগ পেতে হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই পুকুরের পাড় পুনরায় সংস্কার করা না গেলে ফের মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। এমনটিই আশঙ্কা মাছ চাষিদের।

আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের অক্টোবরের প্রথম দিকে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়। ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০ মিলিমিটারের বেশি। তবে আবহাওয়া অফিস ২৪ ঘণ্টা করে বৃষ্টির হিসাব করে থাকে। এতে আগের দিন সকাল ৬টা থেকে পরের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে রেকর্ড করে। এর আগে রাজশাহীতে টানা এত সময় ধরে বৃষ্টি বিগত ১০ বছরেও হয়নি। ওই বছর ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় মাছ চাষিদের অর্ধকোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলেও আবহাওয়া অফিস জানায়।

বিগত বছরে ভারি বর্ষণের ফলে পুকুর ডুবে মাছ ভেসে যাওয়ার দৃশ্য দেখে এ বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই পুকুরের পাড় নতুন করে সংস্কার করতে চান মাছ চাষিরা। কিন্তু তারা পুরনো পুকুরের পাড় সংস্কার করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। পাড় সংস্কার কাজে ব্যবহৃত এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু) ভেঙে দিচ্ছে কিংবা অর্থদন্ড করছে প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পুরনো পুকুরের পাড় সংস্কার করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ মাছ চাষিদের।

গত দুই মাসে পুরনো পুকুরের পাড় সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মাছ চাষি। এদের মধ্যে কানপাড়া গ্রামের মজিবর, তিওরকুড়ি গ্রামের ইব্রাহিম, পালি গ্রামের মুজিবর, চৌপুকুরিয়া গ্রামের ইতি, নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের নান্টু, শ্যামপুর গ্রামের কুদ্দুস ও বাজুখলসী গ্রামের মানিক পুরনো পুকুর সংস্কারের জন্য আবেদন করেও অনুমোদন পাননি। ৫ বিঘা থেকে ২০ বিঘা আয়তনের পুকুর রয়েছে এসব মাছ চাষির।

এদিকে চৌবাড়িয়া গ্রামের রাকিব তার ১২ বিঘা আয়তনের পুরনো পুকুরের পাড় সংস্কারের আবেদন করেও অনুমোদন পাননি। অনুমোদন না পেয়ে কাজ শুরু করলেও নানা চাপে অবশেষে কাজ শেষ না করেই তাকে ভেকু তুলে নিতে হয়েছে। রাকিবের মতো অন্য মাছ চাষিদেরও বেগ পেতে হচ্ছে পুরনো পুকুরের পাড় সংস্কারে।

উপজেলা মৎস্যসম্পদ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, বন্যা বা অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুর ডুবে মাছ বা মাছের পোনা ভেসে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ কারণে মাছ চাষিদের পুরনো পুকুরের পাড় সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া পুকুরের পাড় উঁচু করা, জাল বা বানা দিয়ে রাখতেও মাছ চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, কেউ কেউ বাণিজ্যিক স্বার্থে মাটি খনন করে বিক্রি করে আসছিলেন বিধায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভেকু দিয়ে মাটি খনন বন্ধ করা হয়েছে। মাছ চাষিদের কথা বিবেচনা করে পুরনো পুকুরের পাড় সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটা বিহিত করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে