ঝিনাইদহের বিষয়খালীতে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলার বিষয়খালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। দখলদার বাহিনীর কাছে সংবাদ পৌঁছায় ঝিনাইদহের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করার জন্য বিষয়খালী বাজারের বেগবতী নদীর তীরে সংগঠিত হচ্ছে। ১ এপ্রিলের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝিনাইদহ দখলের উদ্দেশে এগিয়ে আসতে থাকে। এ আক্রমণের খবর জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা পেয়ে বিষয়খালীর বেগবতী নদীর তীরে তাদের প্রবল বাধার সৃষ্টি করে। পাকিস্তানি বাহিনীকে রুখতে নদীর তীরের সেতু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। প্রায় ৮ ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। নদীর তীরের সম্মুখযুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফিরে যায় যশোর ক্যান্টনমেন্ট অভিমুখে। যাওয়ার পথে তারা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেই হত্যাযজ্ঞে শহীদ হয় বিষয়খালী হাইস্কুলের ৭ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র গোলাম মোস্তফা। এছাড়াও শহীদ হন বুদ্ধিজীবী মায়াময় ব্যানার্জী, নূরুল ইসলাম মুন্সী, কাশেম আলী, শামছদ্দীন, জাহানারা বেগম, সিদ্দীকুর রহমান, আ. জব্বার, সিরাজ মিয়া, মতিয়ার রহমান, আদ্যনাথ অধিকারী, সৈয়দ আলী, হামিদ আলী খা, জিতেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, আব্দুল হোসেন, গোকুল চন্দ্র, সুধির চন্দ্র সূত্রধর, আদ্যনাথ সাখারী, অনাথ বাগচী, নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস, আইয়ুব মিয়া, দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ভূষণ বাবু, নলিনী গোসাই, দীনেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী, উকিল উদ্দিন, দুঃখু মিয়া, সদর উদ্দীন, দুখী মাহমুদ, আব্দুল কুদ্দুস, খলিলুর রহমান, কাজী নজির উদ্দিন, শমসের আলী ও বিষয়খালী গ্রামের কৃতী সন্তান মাহাতাব মুনিরসহ অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরই মধ্যে দিয়ে ঝিনাইদহের অমিততেজী দামাল তরুণ দল বাংলাদেশের ইতিহাসের যুদ্ধ বিজয়ের গৌরবের প্রথম মাইলফলক স্থাপন করে বিষয়খালী যুদ্ধে। এই যুদ্ধের কাহিনী প্রথমে বিবিসি, ফরাসি বার্তা সংস্থা ও অস্ট্রেলিয়া রেডিও এবিসিতে প্রচারিত হয়। এই সম্মুখযুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন যশোর সেনানিবাসের বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক এবং ইপিআর-এর জোয়ানরা, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের হাবিলদারাসহ স্থানীয় বিষয়খালী গ্রামের সংগ্রামী জনতা। এই দিনটি প্রতি বছর বিষয়খালী তথা ঝিনাইদহবাসী পালন করে আসছে। বিষয়খালী শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও 'প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ' নামের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য। তবে অভিযোগ রয়েছে বিষয়খালী যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান না। তালিকায়ও তাদের নাম নেই।