কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় মাদারীপুরের রাজৈরে আখচাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় খুশি তারা। এতে পরিশ্রমও করতে হয় কম, লাভও বেশি। তাই আখচাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। তবে বেশি পরিশ্রম করেও ক্ষতি হওয়ায় ধান, পাট ও বাঙ্গিসহ বিভন্ন ফসল চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।
আখ একটি ফল। দেখতে বাঁশ ও ঘাস সাদৃশ্য। জন্ডিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগের মহাওষুধ নামেও পরিচিত এই ফলটি। আখ মূলত চিনি তৈরির বড় একটি উৎস। কিন্তু মানুষ শারীরিকভাবে বিভিন্ন উপকার পেতে মুখে চিবিয়ে ও মেশিনে রস করে খেয়ে থাকেন। তাই আখের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৫ হেক্টর জমিতে আখচাষ করা হয়েছে। যা গত বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৭৫ হেক্টর। এই বছর ১০ হেক্টর বেশি জমিতে আখের চাষাবাদ বেড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশে উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের সুতারকান্দি ও গঙ্গাবর্দী গ্রামে সব থেকে বেশি চাষাবাদ করেছেন চাষিরা। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন। আখগুলো প্রতি পিস ২৫-২৮ টাকা দরে ও মণ হিসেবে ৬৫০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
গঙ্গাবর্দী গ্রামের চাষি আব্দুর রাজ্জাক ফকির জানান, দুই বছর যাবত ২০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করে আসছেন তিনি। ২০ হাজার টাকা খরচ করে এ পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করতে পেরেছেন। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, যশোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের প্রায় ১৫ টি জেলা থেকে এখানে আখ কিনতে আসেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আগে এই জমিতে তিনি ধান, পাট, সরিষা ও বাঙ্গি করতেন। তবে এগুলোতে খরচ ও পরিশ্রম বেশি হয়, কিন্তু লাভ হয় কম। তাই আখচাষ করে লাভবান হওয়ায় খুশি তিনি।
আরেক চাষি জাহাঙ্গীর ফকির জানান, তিনি এ বছর ৭ বিঘা জমিতে আখচাষ করেছেন। তার নিজস্ব কোনো জমি নেই। ৪ বছর যাবত বছরে বিঘাপ্রতি ২৫ হাজার টাকায় করালি জমি নিয়ে আখ চাষাবাদ করছেন তিনি। তার বিঘাপ্রতি এক লাখ টাকা করে মোট খরচ হয়েছে ৭ লাখ টাকা। এই মৌসুমে তিনি ১৩ লাখ টাকার আখ বিক্রি করেছেন। এর আগে তিনি পাট, ধান ও গ্যান্ডারি জাতের আখচাষ করে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'আমরা আশা করছি, আগামী বছর আরও ১৫-২০ হেক্টর জমিতে আখের চাষাবাদ বাড়বে। এ ছাড়া আখের সঙ্গে বিভিন্ন সাথী ফসল চাষ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। ইতোমধ্যে তারা আখের সঙ্গে অন্য সবজি চাষ করেও লাভবান হচ্ছেন।'