মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে নির্মমভাবে শত শত মানুষকে একত্রে হত্যা করে গণকবরে মাটি চাপা দিয়েছিল। সেই গণকবরগুলোকে পরবর্তীতে বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে মাদারীপুরের বৃহৎ চারটি বধ্যভূমিকে চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। যার অংশ হিসেবে মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের একটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভটি শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে। স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করায় এলাকার তরুণ প্রজন্মসহ এলাকাবাসী আনন্দিত।
মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় খলিল বাহিনীকে ১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে গ্রামের ১৩৫ জনকে হত্যা করে। কলাগাছিয়া গ্রামের বর্তমান এবিসিকে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সামনের তখনকার ফাঁকা স্থানে গণকবর দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ৭০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে মেসার্স ফারদিন বিল্ডার্স মাটি ভরাটের মাধ্যমে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু করে। বর্তমানে নির্মাণ কাজ শেষের পথে। চলতি মাসেই এই বধ্যভূমির লিখিত ইতিহাসসহ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষার্থী দ্বীপ মজুমদার বলেন, 'স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে কলাগাছিয়া গ্রামের শতাধিকের বেশি মানুষকে গণহত্যা করে মাটিচাপা দিয়েছে তা আমি জানতাম না। এখানে এই বধ্যভূমি নির্মাণের ফলে এলকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারলাম।'
আরেক শিক্ষার্থী তনয় অধিকারী বলেন, 'আমাদের এই কলাগাছিয়ার বধ্যভূমিই নয়। পুরো মাদারীপুর জেলায় যতগুলো বধ্যভূমি রয়েছে সবগুলোই সংরক্ষণের দাবি করছি।'
কেন্দুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মো. রায়হান কবীর বলেন, 'মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়ার যেসব মানুষকে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রেখেছিল, সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মুক্তিযুদ্ধের এই অঞ্চলের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। এই জন্য আমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।'
মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুরের খলিল বাহিনীর প্রধান কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান বলেন, 'বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় পর্যায়ের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে জেলার সবগুলো বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করা একান্ত জরুরি। তা না হলে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট হয়ে যাবে। সরকার যেন দ্রম্নত বাকি সবগুলো বধ্যভূমির সংরক্ষণের যেসব জটিলতা রয়েছে তা নিরসন করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়, সেই দাবি জানাচ্ছি।'
মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ের জেলার ৪টি বধ্যভূমিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে ১টি বধ্যভূমির নির্মাণ কাজ শেষের পথে। শিগগিরই জনসাধাণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বাকি ৩টির জমি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রম্নত নিরসন করে শিগগিরই বধ্যভূমির নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।