বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বিলাইছড়িতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অভাবে বাড়ছে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতি

রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বিলাইছড়িতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অভাবে বাড়ছে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতি

কাপ্তাই লেক এবং পাহাড় ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর উপজেলা রাঙামাটির বিলাইছড়ি। পর্যটনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারাবছর এই উপজেলায় আসেন শত শত পর্যটক। বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গম ইউনিয়ন বড়থলি ইউনিয়ন এই উপজেলায় অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে একমাত্র নৌপথে জেলা শহর কিংবা আশপাশের উপজেলায় যাতায়াত করা সম্ভব। তবে এ উপজেলায় বড় কোনো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে দ্রম্নত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নেই কোনো ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। যার ফলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন জনগণ এবং ব্যবসায়ীরা। তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় ঘটে যাওয়া উপজেলা সদর হাসপাতালের নিচে একটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা।

সেদিন বিলাইছড়ি উপজেলায় হাসপাতাল এলাকার আলোরঞ্জন দেওয়ানের বাসার পাশে বসবাসরত ৬ জনের বাসাবাড়ি একেবারেই ভস্মীভূত হয়ে যায় আগুনের লেলিহান শিখায়। এতে বিটুময় চাকমা, ভীমসেন, সন্ধ্যা, সাত্তারেরসহ মোট ৬টি ঘর একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান জানান, বৈদু্যতিক শর্টশার্কিট থেকে এ আগুনে সূত্রপাত। এই ঘটনায় প্রায় ৭৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসী।

সেদিনের ঘটনা ছাড়াও গত বছরের ৮ মে অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে কেংড়াছড়ি বাজার। এ সময় কেংড়াছড়ি বাজারের একটি চায়ের দোকান থেকে আগুন লেগে ৮০ দোকান এবং বসতবাড়ি পুড়ে যায়। এ ঘটনায় এখনো ব্যবসায়ীরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। সম্প্রতি পুড়ে গেছে দুর্গম পাংখোয়া পাড়ার কিছু ঘরবাড়ি।

স্থানীয় জনগণ, ভুক্তভোগী পরিবার, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বিলাইছড়ি উপজেলায় কোনো ফায়ার সার্ভিস স্টেশন বা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। তাই আগুন লাগার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় লেক হতে পানি নিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। উপজেলাটি দুর্গম হওয়ায় আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে জেলা সদর বা কাপ্তাই উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা।

বিলাইছড়ি বাজার এলাকার বাসিন্দা ডি কে রুবেল চৌধুরী, সৈকত, বিপস্নব বড়ুয়াসহ অনেকে বলেন, 'আমাদের চোখের সামনে সেদিন আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে গেছে। আমরা কিছুই করতে পারলাম না। আজকে যদি বিলাইছড়িতে একটা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকত তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেত।'

বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুকুমার চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহীদুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে বিলাইছড়ি উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন করা খুবই জরুরি।

বিলাইছড়ি থানার ওসি আকতার হোসেন বলেন, গত ২৭ মার্চ বিলাইছড়ি হাসপাতাল এলাকায় আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক সংগঠন এবং স্থানীয়দের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় দেড় ঘণ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। তবে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে আরও দ্রম্নত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।

বিলাইছড়ি ইউএনও সিফাত উদ্দিন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন যদি বিলাইছড়িতে থাকত তাহলে অগ্নিকান্ডসহ যে কোনো দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতো। আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজন হলে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দেব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে