ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ও সরাইলে ছুরিকাঘাতে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে চার জেলায় বিভিন্ন ঘটনায় নৈশপ্রহরীসহ অপমৃতু্য হওয়া চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও পাবনার ঈশ্বরদী থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইল প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টাকা-পয়সার লেনদেনকে কেন্দ্র করে মো. মুছা মিয়া (৩৪) ও লাল খাঁ (২৪) নামে দুই যুবক খুন হয়েছেন। শনিবার বেলা ১১টায় জেলার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের দক্ষিণখার গ্রাম ও গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় সরাইল উপজেলার বড্ডাপাড়া গ্রামে পৃথক এই খুনের ঘটনা ঘটে।
নিহত মুছা কসবা উপজেলার দক্ষিণখার গ্রামের জজ মিয়ার ছেলে ও নিহত লাল খাঁ সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিখাতা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। লাল খাঁ পেশায় মোটর সাইকেলের মিস্ত্রি ছিলেন এবং মুছা মিয়া কৃষি কাজ করতেন।
লাল খাঁকে খুনের ঘটনায় পুলিশ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নরসিংসার গ্রামের নুর মিয়ার ছেলে মো. জসিম এবং জেলার বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে আল-আমিন। আল-আমিন পেশায় রিকশা চালক।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ বলেন, নিহত মুছার সঙ্গে একই গ্রামের রুহুল আমিনের জমির পত্তনের টাকা নিয়ে লেনদেন ছিল।
শনিবার সকালে মুছা বিরোধপূর্ণ জমিতে যাওয়ার পর রুহুল আমিনে সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রুহুল ছুরিকাঘাত করলে মুছা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিলে চিকিৎসক মুসাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে সরাইল থানার ওসি এমরানুল ইসলাম বলেন, নিহত লাল খাঁ তার পূর্বপরিচিত আল-আমিনের কাছে কিছু টাকা পেতেন। শুক্রবার বিকালে টাকার জন্য আল-আমিনের কাছে যান লাল খাঁ। আল-আমিন রাতে টাকা দেবেন বলে জানান। পরে রাত সাড়ে ১০টায় লাল খাঁকে টাকা দেওয়ার কথা বলে বড্ডাপাড়ায় ডেকে নিয়ে যান আল-আমিন ও জসিম। পাওনা টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আল-আমিন ও জসিম মিলে লাল খাঁকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই লাল খাঁ মারা যান। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া করে ছুরিসহ জসিমকে আটক করে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আল-আমিনকেও আটক করেছে। এ ঘটনায় লাল খাঁর স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নৈশপ্রহরী নূরুল ইসলামের (৬০) গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একটি কক্ষে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। নূরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কোল গয়লা মহলস্নার বাসিন্দা।
অফিস সহকারী আতিকুল ইসলাম আতিক বলেন, 'তিনি নৈশপ্রহরী হওয়ায় প্রতিদিন অফিসেই থাকতেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় অফিসে গিয়ে তার জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি রুমের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়েছেন।'
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, 'বিষয়টি জানার পরই থানায় অবহিত করেছি। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।'
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটি আত্মহত্যা না হত্যা সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীতে দাদার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে ইমাম হোসেন গাজী (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র প্রাণ হারিয়েছে। উপজেলার শ্রেণিখালী এলাকায় শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে। ইমাম হোসেন স্থানীয় শ্রেণিখালী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী শরাফত আলী গাজীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইমাম তার দাদা খলিল গাজীর সঙ্গে বাড়ির সামনে পানগুছি নদীতে মাছ ধরতে যায়। এ সময় জালের দড়িতে পেঁচিয়ে জালের সঙ্গে ডুবে যায় সে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা নদীতে তলস্নাশি করে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে গাছের ডাল কাটতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে এক দিনমজুরের মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, শুক্রবার দুপুরে উপজেলার হাড়িডাঙ্গা গ্রামে।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার রাজারহাট সদর ইউনিয়নের দূর্গাচরন মধ্য কালিপাঠ গ্রামের মৃত বাবু রামের ছেলে অনল রায় (৫০) অভাবের তাড়নায় দীর্ঘদিন ধরে দিন মজুরের কাছ করে আসছেন। ঘটনার দিন শুক্রবার প্রতিবেশী হাড়িডাঙ্গা গ্রামের কৃষ্ণ রায়ের বাড়িতে গাছের ডাল কাটাতে গাছে ওঠেন। এ সময় অসাবধানতাবসত পা ফসকে মাটিতে পড়ে যান। তাকে রাজারহাট স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, ঈশ্বরদীতে শয়ন কক্ষের বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার পাকশি ইউনিয়নের বাঘইল পুরাতন পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সেতু খাতুন (২২) ওই এলাকার বুদু মালিথার ছেলে মামুনের স্ত্রী।
জানা যায়, ঘটনার দিন ভোর রাতে সেহেরির খাবার রান্নার জন্য উঠে সেতুকে বারান্দায় গ্রিলের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন এক প্রতিবেশী। এরপর অন্যদের জানালে তারা সেতুকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেশীরা রাতেই ঈশ্বরদী থানায় অবগত করেন।
থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, ভোর ৬টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বামী এবং শ্বশুর উভয়ই পলাতক রয়েছেন। এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।