ঈদ সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কাপড়ের হাট। কয়েক হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার জমজমাট উপস্থিতিই জানান দিচ্ছে হাটের ব্যস্ততা। বিগত কয়েক হাটে বেচাকেনা আশাব্যঞ্জক না হলেও গত বুধবারের হাটে বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাপড়ের হাটজুড়ে রয়েছে দেশীয় শাড়ি ও লুঙ্গির বিপুল সমারোহ। একসময় এই হাটে ভারতীয় শাড়ির প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে দেশীয় শাড়ির কাছে তারা হার মেনেছে। ভারতীয় সিল্ক আর পাকিস্তানি জর্জেট শাড়িকে পেছনে ফেলে এখন বাঙালি নারীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে শাহজাদপুরের তাঁতের তৈরি রংবেরঙের শাড়ি।
গত বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শাহজাদপুর হাটের বিশাল এলাকাজুড়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কলরবে মুখরিত। তাঁতি ও পাইকারদের ভিড়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ। দীর্ঘদিন পর কেনাবেচা ভালো হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে তাঁতিদের মনে। এ কাপড়ের হাটকে ঘিরে বৃহত্তর সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী, কামারখন্দ, পাবনার বেড়া, সাথিয়া, পাবনা সদর, দোগাছিসহ বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক হ্যান্ডলুম, পাওয়ারলুম, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ডাইং, এমব্রডারিসহ বিভিন্ন সহায়ক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে।
বিক্রেতাদের মধ্যে হাটে উপস্থিত তাঁতি শফিকুল ইসলাম বলেন, 'এক মাস আগে কেউ কাপড় দামই করেনি। এখন অনেক ক্রেতা দামদর করছে। তবে একটু ধীরে-সুস্থেই বিক্রি করছি।'
শাহজাদপুরের হামলাকোলার তাঁত কারখানার মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, প্রতি সপ্তাহে কারখানায় প্রায় ২০০টি করে শাড়ি তৈরি হচ্ছে। একটি শাড়ি বানাতে একজন দক্ষ শ্রমিকের চার দিন সময় লাগে। ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনে শাড়ি তৈরি হয়েছে। তবে তাঁত উপকরণের আশঙ্কাজনকভাবে মূল্য বৃদ্ধি ও উৎপাদন কম হওয়ায় গত বছরের তুলনায় তাঁত কাপড়ের দাম এবার কিছুটা বেড়েছে।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে কাপড় কিনতে আসা পাইকার খোরশেদ আলম জানান, তারা প্রতি সপ্তাহে শাহজাদপুর হাটে তাঁতের শাড়ি ও লুঙ্গি কিনতে আসেন। বিগত বছরের তুলনায় তার দোকানে তাতের শাড়ি-লুঙ্গির চাহিদা বেশি। তাই এবার হাট থেকে একটু বেশি করে মালামাল কেনার ইচ্ছা পোষণ করেন।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, শাহজাদপুরের কাপড়ের হাট শাহজাদপুর তথা সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্য। এ হাটকে কেন্দ্র করে বিকশিত হচ্ছে এখানকার তাঁতশিল্প। কাপড়ের হাট সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ও তাঁতশিল্পের সঙ্গে লাখো শ্রমিকের জীবন-জীবিকা জড়িত। ঈদকে ঘিরে প্রতি বছর এ হাটে কয়েক কোটি টাকার কেনাবেচা হয়ে থাকে। তাই কাপড়ের হাটে কেনাবেচা নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।