ঈদকে ঘিরে কর্মমুখর সিরাজগঞ্জের তাঁতপলস্নী
প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ
ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের তাঁতপলস্নীতে শাড়ি লুঙ্গি গামছা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে তাঁতীরা। ব্যস্ততা বেড়েছে তাঁত মালিক ও শ্রমিকদেরও। বিভিন্ন নকশার শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছেন তাঁত শ্রমিকরা। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের চাহিদা কম। এ ছাড়া রং, সুতা ও বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়ায় শাড়ি-লুঙ্গি তৈরির খরচ বেড়েছে।
তাঁত মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলার মধ্যে বেশি কারখানা রয়েছে বেলকুচি, শাহজাদপুর, উলস্নাপাড়া, সদর ও কামারখন্দে। জেলায় ইঞ্জিন ও হাতে চালিত প্রায় সাড়ে তিন লাখের বেশি তাঁত রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জেলায় তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গি ও গামছার জমজমাট ব্যবসা হয়। এখন তৈরি হচ্ছে তোষা, জামদানি, কটন জামদানি, হাফ সিল্ক, কাতানসহ বিভিন্ন নকশার শাড়ি ও লুঙ্গি। প্রতিটি শাড়ি ৭০০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। জেলার তাঁত পলস্নীগুলোতে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে পালস্না দিয়ে কাজ করেন নারী শ্রমিকরাও। তারা নলি ভরা, সুতা প্রস্তুত করা, মাড় দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। এই অঞ্চলের উৎপাদিত শাড়ি ও লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। ঢাকার বিভিন্ন বুটিক হাউস এসব শাড়ি-লুঙ্গি রপ্তানি করছে বলে জানান তাঁত মালিকরা।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বেলকুচি গ্রামের তাঁত মালিক রহমত আলী বলেন, 'গত বছর ব্যবসা মোটামুটি ভালো হয়েছে। এবারও চাহিদা রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় কম। শ্রমিকরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। তারা বাহারি রঙের শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছেন। রং ও সুতাসহ কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য খুব একটা লাভবান হতে পারছি না।'
রং-সুতার দাম বেশি হওয়ায় কাপড়ের বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে জানান বেলকুচি উপজেলার তামাই এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, 'অবস্থা ভালো না। ঋণ করে ব্যবসা করতে হয়। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। বেচাকেনা তুলনামূলক কম। এ ছাড়া শ্রমিক সংকটও রয়েছে। কাম কাজের অবস্থা ঈদের আগে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।'
একই কথা জানান কামারখন্দ উপজেলার হায়দারপুর গ্রামের ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, 'এবার কাপড়ের চাহিদা কম।' বেলকুচি উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের শ্রমিক ইউসুফ আলী বলেন, 'আমরা যেভাবে কাজ করি সেভাবে আমাদের বেতন নাই। সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করলে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। মজুরি কম হওয়ায় শ্রমিকরা আসে না। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।
সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প অনেক পুরনো বলে জানান বেলকুচি হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ রায়। তিনি বলেন, 'আমরা ভালো শাড়ি তৈরি করি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের বেলকুচির তাঁতের শাড়ি পরেন। আমরা চাচ্ছি এই শাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য। এজন্য সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতার দরকার।'
সিরাজগঞ্জ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদিউজ্জামান মন্ডল বলেন, 'সিরাজগঞ্জ জেলায় সাড়ে তিন লাখের ওপরে তাঁত রয়েছে। এসব তাঁতে যে কাপড় উৎপাদন হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে তিন হাজার কোটি টাকা কাপড় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা সেই অনুপাতে কম সাড়া পাচ্ছি। শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রির যে রমরমা ভাব সেটা নেই। রং, সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য খুব একটা লাভবান হতে পারছি না। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত বছরের তুলনায় এবার চাহিদা অনেক কম। শ্রমিক সংকটও রয়েছে।
সোয়ান লুঙ্গির স্বত্বাধিকারী বাবু সরকার জানান, সারাবছর যেমন-তেমন চললেও আমরা তাঁতের ব্যবসায়ীরা ঈদ ও পূজাকে ঘিরে আশায় থাকি ভালো ব্যবসা হবে। সেই অনুপাতে তাঁতীরা কাপড় উৎপাদন করে থাকে। এ বছরও তারই ধারাবাহিকতায় আশা রাখছি যে ঈদে ভালো একটা ব্যবসা হবে। আমরা কিছু হলেও লাভের মুখ দেখব। তবে এখনো ভালো কিছু বুঝতেছি না। সামনে আরও দিন রয়েছে দেখা যাক কি হয়। আশা করি কেনা বেচা ভালোই হবে।'
জ্যোতি শাড়ি ঘরের স্বত্বাধিকারী জানান, 'রোজার বেশ কয়েকটা চলে গেলেও এখনো কাপড়ের বাজার খুব একটা সন্তোষ জনক না। তবে সামনে আরও কয়েকদিন রয়েছে। আশা করছি ঈদকে ঘিরে আমরা যে আশায় বুক বেঁধেছি তা পূর্ণ হবে।'