চরম ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
ছুটিতে বন্ধ পবিপ্রবির আবাসিক হল
প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
পবিপ্রবি প্রতিনিধি
পবিত্র জুমাতুল বিদা, শব-ই-কদর, ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) ছুটির সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব আবাসিক হল। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় সব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন ও চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত।
২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ. দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পবিত্র জুমাতুল বিদা, শবেকদর, ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ২৯ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসসহ সব শিক্ষা ও প্রশাসনিক বিভাগের অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী ২৯ মার্চ বিকাল ৫টা থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব আবাসিক হলসমূহ বন্ধ থাকবে এবং ১৬ এপ্রিল সকাল ৬টায় আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। বন্ধকালীন সময়ে ছাত্রছাত্রীদের হলে অবস্থান না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এভাবে প্রতিবার ছোট-বড় সব বিভিন্ন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির সঙ্গে হল বন্ধ রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, এর ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। করোনা-পরবর্তীতে একই সঙ্গে সেমিস্টার এবং চাকরির পড়াশোনার চাপ রয়েছে। এর মধ্যে এসব ছুটিতে হল বন্ধ করায় বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় উত্তরবঙ্গ এবং পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীসহ দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের। একদিকে পড়াশোনার ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে অধিক ভাড়া বহন করে ছুটিতেও বাড়ি যেতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাদের টিউশনি করে চলতে হয়। হল বন্ধ রাখায় টিউশনির পুরো মাস পড়াতে পারেন না বলে মাসিক বেতন না পেয়ে অনেকটা চাপ ও হতাশা নিয়ে বাড়ির পথ ধরতে হয় বলে অনেকের দাবি।
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাইজুর আলম মঈন জানান, 'করোনা পরবর্তী সময়গুলোতে সেমিস্টার পরীক্ষা ও পড়াশোনার চাপ দুইটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি হলে থেকে এখন চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি। এই ছুটিতে হল বন্ধ করে দেওয়ায় এখন পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, 'হঠাৎ হল বন্ধ ঘোষণা করায় বাধ্য হয়ে আমাকে আমার গ্রামের বাড়ি চলে আসতে হয়েছে। অথচ আমাদের ঈদের ছুটির কিছুদিন পরই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। টিউশনি ছিল তাকে এই সময়ের জন্য ছুটি দিয়ে আসতে হয়েছে। টিউশনিতে দীর্ঘছুটি দেওয়ায় অভিভাবকদের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়।'
কৃষি অনুষদের আবাসিক শিক্ষার্থী ফরহাদ ইসলাম বলেন, 'বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম মাঝারি ছুটিতে হল বন্ধ ঘোষণা করা হয় না। এমনকি ঈদের ছুটির সময়ও হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা থাকে। সেখানে পবিপ্রবি প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পরিমাণকে বৃদ্ধি করেছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের ছোট-বড় বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ছুটিতে হল খোলা রাখা হয়। এই ঈদের লম্বা ছুটির সময়ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়।
এ বিষয়ে রেজিস্টার অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু জানান, 'প্রভোস্ট কাউন্সিল মিটিংয়ের মাধ্যমে আমাদের যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আমরা সে অনুযায়ী নোটিশ করেছি। এরপরও হলে থাকার বিষয়ে কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।'
এম কেরামত আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আশরাফুল বলেন, 'হল বন্ধেও শিক্ষার্থীরা থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে আগে থেকে আবেদন দিলে আমরা বিবেচনা করতাম। এখন আর এ বিষয়ে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নাই।'