সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নিয়ামতপুরে ভালো দামে আলু চাষিদের মুখে হাসি

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
নিয়ামতপুরে ভালো দামে আলু চাষিদের মুখে হাসি

চৈত্রের সূর্য ঠিক মাথার উপরে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন সবাই। তাদের একহাতে কোদাল, অন্যহাতে ব্যাগ। অপেক্ষা সংকেতের। সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল কোদাল দিয়ে মাটি কোপানো।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বটতলী মাঠে এভাবেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে আলু কুড়ানোর ধুম। বিভিন্ন গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এসেছে আলু কুড়াতে। চাষিদের আলুতোলা শেষ হলে তারা নেমে পড়ছেন সেই জমিতে।

বটতলী মাঠে গিয়ে দেখা যায় কয়েকশ' মানুষ কোদাল দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে আলু কুড়ানোর কাজে ব্যস্ত। তাদের বেশিরভাগই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজন। জমিতেই ছাতা মাথায় ১০ মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন মিনতি কুজুর। তিনি জানালেন, লোকজনের কাছে শুনেছেন এখানে আলু কুড়ানো হচ্ছে। তাই ছেলেকে নিয়েই গ্রামের লোকজনের সঙ্গে এসেছেন আলু কুড়াতে।

ভাবিচা গ্রামের ধলু শিং জানালেন, নিজেদের খাওয়ার জন্য এসব আলু কুড়াচ্ছেন তারা। তবে গত বছরের চেয়ে লোকজন বেশি হওয়ায় আলু কম কুড়াতে পারছেন। গলুইকুড়া থেকে এসেছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বাধীন মাহাতো আর শহীদ দাস। তারা জানালো, দুইজনেই মায়ের সঙ্গে এসেছে।

গোমস্তাপুর উপজেলার বড়দাদপুর গ্রাম থেকে এসেছেন অজিত চন্দ্র। তিনি জানালেন, লোকজনের কাছ থেকে শুনে আলু কুড়াতে এসেছেন। ভালোই আলু পাচ্ছেন।

বিকালে কুড়ানো আলু নিয়ে ভ্যানে বাড়ি ফিরছিলেন গোরাই গ্রামের নরেন্দ্র ওঁরাও। তার ভ্যানে আরও চারজন ছিলেন। তিনি জানালেন, লোকজনের কাছে শুনে গিয়েছিলেন আলু কুড়াতে। সবাই ৩০ কেজি করে আলু কুড়াতে পেরেছেন।

মো. রেজাউন নবী ১৮ বছর ধরে আলু চাষ করছেন। বটতলী মাঠে গত তিন বছর ধরে স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে আলু চাষ করছেন। তিনি জানালেন, এবার ৪০ বিঘা জমিতে ডায়মন্ড, হোলেন্ডার, এসটেরিক্স জাতের আলু লাগিয়েছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি গড়ে ১০০ মণ আলুর ফলন হয়েছে। তিনি আরও জানালেন, জমিতে তাদের আলু তোলা শেষ হলে লোকজনদের আলু কুড়াতে দেন। এর জন্য তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, নিয়ামতপুর উপজেলায় এবছর ১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। শর্করার অন্যতম উৎস হলো আলু। লোকজন আলু কুড়িয়ে পরিবারের শর্করার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে। অতিরিক্ত আলু বিক্রি করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবানও হতে পারবে। তাছাড়া আলু উৎপাদন করতে পানিও কম লাগে। তাই আমরা আলু চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে