মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এরই মধ্যে ঈদের কেনাকাটায় ধুম পড়েছে। বেড়েছে দর্জিদের ব্যস্ততা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, বড় উৎসব, বড় আয়োজন। চারপাশে ঈদের কেনাকাটার ধুম। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণি বিতানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিতানগুলো দুপুর থেকে রূপ নেয় ক্রেতা ও দর্শনার্থী সমুদ্রে। সন্ধ্যার আলোর ঝলকানির ভাষা ঈদ আসছে। অনেক রাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। বিপণি বিতানে আসার সঙ্গী, সাজগোছ যার যে রকমই হোক, উদ্দেশ্য আসন্ন ঈদুল ফিতরের জন্য নতুন পোশাক এবং শরীরে জড়ানোর অন্য অনুষঙ্গ কেনা। ভিড়, ধাক্কাধাক্কি, যানজট সবকিছু ছাপিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সবার হাতেই থাকছে এক বা একাধিক নতুন কাপড়ে ভরা ব্যাগ।
গাংনীর বিভিন্ন বিপণি বিতান ঘুরে দেখা যায়, ঈদের কেনাকাটায় মানুষের ঢল। বামন্দি বাজার ও বড় বাজারের বিভিন্ন বিপনি বিতান ও শপিং মলে ছিল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়। বিপণি বিতানগুলোও যেন ক্রেতাদের দখলে চলে যেতে শুরু করে দুপুর পর থেকে। অন্যবারের মতো এবারও কোন টিভি চ্যানেলের অভিনেতা অভিনেত্রীর নামের পোশাকের আগ্রাসন নেই মার্কেটগুলোতে।
ফুটপাতেও ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। অভিজাত বিপনিতে যা পাওয়া যায় ঠিক একই ধরনের অনুষঙ্গ পাওয়া যাচ্ছে এখানে। তবে গুণগত মানের দিক থেকে একটু কম হলেও আনন্দ আছে একই ধরনের। এখানে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন বিত্তদের আগমন। কয়েকজন জানালেন, ফুটপাতে সালোয়ার কামিজ ও বাচ্চাদের কাপড় চোপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। শার্ট ও গেঞ্জি বিক্রি হচ্ছে অন্য অনুষঙ্গের তুলনায় কম।
গাংনী এসএম পস্নাজার কাজল বস্ত্রালয়ের স্বত্ব্বাধিকারী হাফিজুর রহমান কাজল জানান, এবারে নারীদের চিরচেনা অভ্যাস নারীদের নাড়ীর টান শাড়ির বাজার বেশ চাঙ্গা। তরুণী ও অল্প বয়সিদের পছন্দ কাঞ্চি বরণ কাতান আর মধ্য বয়সিদের পছন্দ সুতি শাড়ি। তবে দাম নাগালের মধ্যেই। ১৬০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে কাঞ্চি বরণ কাতান। এখন বেচা বিক্রি বেশ জমজমাট বলেও জানান তিনি।
ইমন ক্লথ স্টোর অ্যান্ড বস্ত্রালয়ের মালিক রবিউল ইসলাম জানান, তরুণীদের মধ্যে পাকিস্তানি লোচ, ছাফুনি, পদ্মজা সিল্ক কাতান জর্জেট বেশ জনপ্রিয়। ৭৫০ টাকা থেকে ৪২৫০ টাকা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে সালোয়ার কামিজ। বিশেষ করে দামি ড্রেসগুলো প্রবাসীর পরিবার ও সরকারি চাকরিজীবী পরিবারের লোকজন ইতোমধ্যে কিনে ফেলেছেন। অন্য বছর এ সময় তেমন বেচা বিক্রি না হলেও এবার আগে ভাগেই ঈদের বাজার জমে উঠেছে।
যুগীর গোফা গ্রামের লিপটন জানান, আমিরুল মার্কেট থেকে রাজমনি শপিং কমপেস্নক্সে এসেছেন তিনি। ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলেও পোশাক দেখতে পারেননি। এত ভিড় যে, ভালো-মন্দ দেখে কেনাটা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারপরও অনুষঙ্গ কিনতে হয়েছে। অবশ্য বেশি দামের অভিযোগ করছেন তিনি।
এসএম পস্নাজায় মার্কেট করতে আসা ছাতিয়ান গ্রামের রহিমা অভিযোগ করেন, ক্রেতার ভিড় হলেও দোকানিরা পণ্যের দাম কমায়নি। যে থ্রিপিস সপ্তাহখানেক আগে কিনেছেন হাজার টাকায়, সেটি কয়েকটি দোকানে বিক্রি হয়েছে একদাম ১৮৫০ টাকায়। এটি নিছক অবিচার। ঈদের সময় হলেই দোকানিরা দাম বেশি রাখেন।
বাজার ঘুরে এবং ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অভিজাত বিপনি থেকে ফুটপাত সবখানেই বেচা বিক্রি বেড়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের চাপ রয়েছে ফুটপাতে। শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়া, শার্ট, পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাকের সঙ্গে গহনা, পাদুকা এবং প্রসাধনী কিনতেও ভুলছেন না ক্রেতারা।
গাংনী থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, রোজা শুরুর দিক থেকে ৯-১০ রোজা পর্যন্ত নীলফামারীর সৈয়দপুরে ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা শুরু না হলেও ১২-১৩ রোজা থেকে কেনাকাটার ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মহিলা-পুরুষ, যুবক-যুবতিদের শহরের পস্নাজা সুপার মার্কেট, থ্যাংকস ক্লথ স্টোর ও রেলওয়ে বাজারের দোকানগুলোতে ভিড় জমতে।
প্রতিবারের মতো অবস্থা এবার না হলেও খুব একটা ফুরসত নেই টেইলার্স দোকানের দর্জিদের। চাপের কারণে হয়তো ২০ রমজানের পর অর্ডার নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করতে হতে পারে বলে মনে করছেন টেইলার্স মালিকরা। অন্যদিকে শহরের পস্নাজা সুপার মার্কেট, থ্যাংকস ক্লথ মার্কেট ও রেলওয়ে বাজারের গার্মেন্টেসের দোকানগুলোতে টুকটাক কেনাকাটা চললেও যারা টেইলার্সে নিজেদের পোশাক পছন্দ করেন তারা কাটা কাপড় কিনে পোশাক তৈরির জন্য টেইলার্সের দোকানগুলোতে ভিড় জমানো শুরু করেছেন। গার্মেন্টস দোকানের মালিকরা বলছেন ১৫-১৬ রোজার পর থেকে তাদের বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হবে। ইতিমধ্যে তারা আধুনিক ডিজাইনের পোশাকের সমাহার নিয়ে বেচাকেনার জন্য তৈরি রয়েছেন। ইতিমধ্যে রোজার আগ থেকেই গার্মেন্টস, কাপড়, টেইলার্স, মনিহারি দোকানগুলোর মালিকরা তাদের দোকানগুলো নতুন করে সংস্কারসহ নতুন করে রঙে করেছেন।
টেইলার্স মালিকরা যদিও মনে করেন যে, এখন লোকজন গার্মেন্টস দোকান থেকেই তাদের তৈরি পোশাক কেনায় সেলাই করে এখন খুব কম মানুষজনই পোশাক পরেন। তবে রুচিশীল মানুষের প্রথম পছন্দ দক্ষ টেইলার্সের কাছে মনের মতো করে পোশাক তৈরি করে নেওয়া। তাই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ও বয়সিরা পোশাক গার্মেন্টসের চেয়ে টেইলার্সে পোশাক তৈরির জন্য ভিড় করছেন এখন বেশি।
শহরের বিভিন্ন টেইলার্স দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, কাটা কাপড়ের দোকান থেকে কাপড় কিনে পছন্দের পোশাক তৈরির জন্য টেইলার্স দোকানে ভিড় করছেন কেউ কেউ। শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে ডিসেন্ট, সানমুন টেইলার্স, ঢাকা টেইলার্স। থ্যাংকস ক্লথের রাস্তায় মতি টেইলার্স, সৌখিন টেইলার্স, স্টুডেন্ট, পারফেক্ট ও বঙ্গবন্ধু সড়ক, শেরেবাংলা রোড, শহীদ তুলশীরাম সড়ক, রেল-লাইনের দু'ধারে, হাতিখানা ক্যাম্প, কাজিরহাটসহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে এবং উপজেলার হাট-বাজারে প্রায় দুই হাজার দর্জির দোকান রয়েছে। রোজা শেষ হতে এখনো অনেক বাকি তবুও ব্যস্ত সময় শুরু হয়েছে দর্জিদের।
ঢাকা টেইলার্স ও টুডে টেইলার্স মালিক জুবায়ের ও জাবেদসহ টেইলার্স মাস্টাররা জানান, শবে বরাতের পর থেকেই ঈদের পোশাক বানানো শুরু হয় আর রমজান মাস শুরু হতেই দশ গুণ অর্ডার বেড়ে যায়। এভাবে ১৫ রমজান পর্যন্ত পোশাক তৈরির অর্ডার নেওয়া হয়ে থাকে। অতি পরিচিতদের অনুরোধ রাখতে শত ব্যস্ততার মধ্যে ২ থেকে ৪টি অতিরিক্ত অর্ডার নেওয়া হয়। তবে আগের মতো না হলেও মোটামুটি ভালোই অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে।
পারফেক্ট টেইলার্সের দর্জি বাবু জানান, এখন আমাদের দিনের পাশাপাশি রাত জেগে কাজ করতে হচ্চে। নারীদের পোশাক তৈরির কারিগররা জানান, ঈদের পোশাক নারীরা রমজান শুরু হতেই ছুটছেন দর্জির দোকানগুলোতে। তবে সেলাইর দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। শহরে বেশি নেওয়া হলে গ্রামে তুলনামূলক নেওয়া হয় কম।